যুগ পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনী | তাঁর জন্ম এবং জীবন বৃত্তান্ত | Sir Ishwar Chandra Vidyanagar: আজ 26 শে সেপ্টেম্বর। আজকের দিনে সর্বযুগের সর্বকালের সেরা বীরপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই আমাদের আজকের আলোচনা উনিশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি পন্ডিত তথা সমাজ সংস্কারক ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর কে নিয়ে। এই বিশিষ্ট সুপন্ডিত বাঙালি মহাপুরুষ কে আমরা আজ জানার চেষ্টা করবো। উনিশ শতকে একজন গরিব দুস্থ বাঙালি সন্তানের পৃথিবী জয়ের সেই আমার কাহিনী আমাদের প্রত্যেকেরই জানা খুবই প্রয়োজন।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী:
উনিশ শতকের বাংলার মহাপুরুষদের মধ্যে একজন অন্যতম ছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। তার অগাধ পান্ডিত্যের দরুন কর্মজীবনের শুরুতেই ইংরেজ সরকার কর্তৃক “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে ভূষিত হন। সাধারণ আপামর গরিব দুঃখী জনসাধারণের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন”দয়ার সাগর” নামে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
বীরসিংহের সিংহশিশু, ঈশ্বর চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামের এক অভাবী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
- পিতা ঠাকুর দাস বন্দোপাধ্যায় খুব অল্প বয়স থেকে কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। ঈশ্বরের বাল্যকাল কাটে তার মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে। মাতা ভগবতী দেবী সেইকালেও আধুনিক চিন্তাধারার অধিকারী ছিলেন। শোনা যায় তাঁর আদেশেই ঈশ্বর চন্দ্র বিধবাদের কল্যানে ব্রতী হন,সেই কালের সমাজে এক অকল্পনীয় পরিবর্তন আনেন।
- তাঁর পিতা ছিলেন সৎ,ন্যায় পরায়ণ,পরিশ্রমী এবং প্রচন্ড মেধার অধিকারী আর মাতা ছিলেন সে যুগের এক মহিয়সী , করুণাময়ী নারী। এই দুজন মানুষের মিলিত আদর্শ পরবর্তীকালে ঈশ্বরের জীবনেও প্রতিফলিত হয়েছিল।
শিক্ষাজীবন:
তাঁর শিক্ষা জীবনে দুটি ধাপ লক্ষ্য করা যায়।
বাল্য শিক্ষা:
ঈশ্বরের বাল্য শিক্ষারজন্য তাকে ভর্তি করা হয় গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায়। সেখানে গ্রামের সকল ছেলেমেয়েই পাঠ গ্রহণ করতো।কিন্তু সনাতন বিশ্বাস মহাশয়এর পাঠ দানের ব্যবস্থা ভালো ছিল না। তিনি ছাত্রদের পাঠ দানের পরিবর্তে শাস্তি দানেই অধিক ব্যাস্ত থাকতেন। এই ব্যাপার টা রামজয় তর্কভূষণ (ঈশ্বরের দাদু) এর খুব খারাপ লাগে।
- কিছু দিন পরে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নাম এক উৎসাহী যুবক পাশের গ্রাম থেকে এসে বীরসিংহ গ্রামে একটি নতুন পাঠশালা খোলেন। তার শিক্ষা দানের পদ্ধতি ছিল অতি উন্নতমানের ।রামজয়,বালক ঈশ্বর কে কালীকান্তের পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দেন। কালীকান্ত ছিলেন ঈশ্বরের চোখে একজন আদর্শ মানুষ।ঈশ্বর সেখানে অত্যন্ত মনোযোগিতার সহিত বাল্য শিক্ষা গ্রহণ করে। তিনি সেখান থেকেই তার সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেন।
উচ্চ শিক্ষা:
এর পরে আসে উচ্চ শিক্ষার পালা। এর জন্য তাকে কলকাতায় যেতে হবে। মা ভগবতী দেবীর
বুকে কান্নার পাথর ভেঙে পড়লেও তিনি একটিবারও ঈশ্বরকে কলকাতা যাওয়া থেকে বাধা দেননি।
- ঠাকুর দাস ঈশ্বর কে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কথিত আছে, পায়ে হেটে গ্রাম থেকে কলকাতা আসার সময় রাস্তার পশে বসানো মাইল ফলকে লেখা ইংরেজি অক্ষর দেখে তিনি অনায়াসেই ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ইংরেজি সংখ্যা রপ্ত করে নেন।এমনি ছিল তাঁর প্রতিভা। কলকাতায় এসে বড় বাজারে সিংহ পরিবারে আশ্রয় নেন।
- ১৮২৯ সালে নয় বছর বয়সে তাঁকে সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়।সেখানে ঈশ্বর খুবই মনোযোগিতার সহিত পঠন-পাঠন শুরু করেন। এই কলেজে তার বন্ধু ছিলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার।
- ১৮৩০ সালে ব্যাকরণ পড়ার সাথে সাথে তিনি ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন। ১৮৩১ সালে বার্ষিক পরীক্ষায় মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনের জন্য মাসিক ৫ টাকা হরে বৃত্তি পেতে থাকেন এবং একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ এবং ৮ টাকা পারিতোষিক পান। এর পর তিনি ভর্তি হন বাক্য শ্রেণীতে। এই শ্রেণীতে তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক কে খুঁজে পান, বিশিষ্ট পন্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। তাঁর থেকে ঈশ্বর প্রচন্ড অনুপ্রাণিত হন।
- ১৮৩৪ সালে কৃতিত্বের সহিত ইংরেজি ষষ্ঠ শ্রেণীর পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন। এরপর ১৮৩৫ সালে অলংকার শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং এবারেও সাফল্যের সহিত ১ বছরের মধ্যে এই শ্রেণীতে পান্ডিত্য অর্জন করেন।
শিক্ষালাভের আরও কিছু তথ্য:
আমরা সকলেই জানি, তিনি কত অভাবের মধ্যে পড়াশোনা জীবন কাটিয়েছেন।বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানোর মতো তেল থাকতো না। অভাবের তাড়নায় কতক দিন খাবার জোটেনি,তবুও তিনি হার মানেননি। প্রদীপ না জ্বললে তিনি রাস্তার ধরে ল্যাম্পের আলোয় বসে পড়াশোনা করেছেন ,সারারাত রাস্তার ধরে ল্যাম্প এর আলোয় বসে পড়াশোনা করে গেছেন। কিন্তু কখনো মনোবল হারাননি , কখনো ক্লান্ত হননি পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে।
- এরপর তিনি একে একে স্মৃতি,বেদান্ত,ন্যায় দর্শন সমস্ত বিষয়ে নিজের পারদর্শিতার সাক্ষর রাখেন। স্মৃতি শ্রেণীর পরীক্ষায় তিনি আশ্চর্জনক ফলাফল করেন এবং এই বছর ই হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন।
- এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ১৮৩৯ সালে ২২ শে এপ্রিল তিনি ল কমিটির পরীক্ষা দেন এবং পূর্বের ন্যায় এই পরীক্ষাতেও অতি উত্তম কৃতিত্বের প্রদর্শন করেন। এই বছর ১৬ই মে হিন্দু ল কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়,যেখানে প্রথমবার তাঁর নামের পরে “বিদ্যাসাগর” উপাধি লেখা হয়।
- ১৮৪০-৪১ সালে তিনি সস্কৃত কলেজ এ পঠন-পাঠন শেষ করেন এবং কর্মজীবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘ ১২ বছর পড়াশোনার পর তিনি সংস্কৃত কলেজ এর পক্ষ থেকে একটি প্রশংসাপত্র পান যেখানে দ্বিতীয়বারের জন্য তার নামের শেষে “বিদ্যাসাগর” উপাধিটি ব্যবহার করা হয়। এর পর থেকে তিনি বিদ্যাসাগর নাম প্রসিদ্ধ হতে থাকেন।
কর্মজীবন:
১৮৩৯ সালে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় তার আশ্চর্যজনক দক্ষতা প্রদর্শনের পর ত্রিপুরা জেলা জজ পন্ডিতের পদে মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু বাবার অনুরোধে তিনিঁ ওই পদ গ্রহণ না করে তার পড়াশোনা চালাতে থাকেন।
প্রাথমিক কর্মজীবন:
- বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন ছিল অতি বাধা-বিড়ম্বনা পূর্ণ। টাকার লোভ ত্যাগ করে শুধুমাত্র নৈতিকতার খাতিরে বারবার তিনি বিভিন্ন চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।শুধুমাত্র মানুষের মঙ্গল কামনার লক্ষ্যে,বাংলার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দানের উদ্দেশে আত্মবলিদান করে বহুবার চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।
- কর্মজীবনের প্রথমেই কলেজ শেষ করে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিতের পদ গ্রহণ করেন। ৫ বছর পরে একই বেতন হারে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদকের পদে মনোনীত হন।
- ১৮৪৭ সালে তিনি সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি নাম একটি বইয়ের দোকান খোলেন।এবং এই বছরেই প্রকাশ করেন হিন্দি “বেতাল পচ্চিসী” অবলম্বনে রচিত তার প্রথম গ্রন্থ “বেতাল পঞ্চবিংশতি” .
- নিজের গ্রন্থাবলী প্রকাশের লক্ষ্যে বন্ধু মদনমোহন তর্কালংকারের সহযোগিতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত প্রেস যন্ত্র নাম একটি ছাপাখানা।এই সময় অন্নদামঙ্গল গ্রন্থের পাঠানুসারে পরিশোধিত আকারে এই কাব্যের পরিমার্জিত দুই খন্ড সম্পাদনা করেন। এবং এটি ছিল তার মুদ্রণ যন্ত্রে ছাপানো প্রথম গ্রন্থ।
এই সময় সংস্কৃত কলেজের তৎকালীন সেক্রেটারি রসময় দত্ত মহাশয়ের সাথে কলেজ পরিচালনার ব্যাপারে মতান্তর দেখা দিলে তিনি সহকারী সম্পাদকের পদে ইস্তফা দেন।
পরবর্তী কর্মজীবন:
১৮৪৯ সালে মাসিক ৮০ টাকা বেতনে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড রাইটার পদে নিযুক্ত হন। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছু বন্ধু এবং শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে সস্থাপনা করলেন সর্বশুভকারী সভা।
- ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন সর্বশুভকারী পত্রিকা আর সেখানে প্রথম যে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হল, সেটি ছিল বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রচনা।যেটি আকস্মিকভাবে সমাজে আলোড়ন ফেলে দিলো এবং ঈশ্বর কে পরিণত করে দিলো সমাজের শত্রুতে। যদিও ঈশ্বর সমাজের তোয়াক্কা করতেন না, বাংলার নিরক্ষর সমাজকে আধুনিক করে তুলতে, সমস্ত রকম কুসংস্কার দূর করতে তিনি ছিলেন দৃহপ্রতিজ্ঞ।তাই তিনি কোনো বাধাকেই বাধা মনে না করে নিজের কাজ কে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
- ১৮৫০ সালের শেষের দিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে ইস্তফা দিয়ে যোগ দেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপকের কাজে। কিছুদিন পরে সেখানকার অস্থায়ী সেক্রেটারি ও তার কিছুদিন পরে ১৫০ টাকা বেতনে অধ্যক্ষ এর পদে মনোনীত ও নিযুক্ত হন।
পুস্তক রচনা:
এতো কাজের মধ্যেও তিনি পুস্তক রচনা ছাড়েননি। তিনি একথা খুব ভালো করে জানতেন সমাজ সংস্কার করতে দেশীয় ভাষায় পুস্তক রচনা খুবই জরুরি,এই উদ্দেশে বিভিন্ন ইংরেজি পুস্তকের বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশ করতে থাকেন।চলতি বছরে তিনি প্রকাশ করেন রুডিমেন্টস অফ নলেজ অবলম্বনে রচিত বোধোদয় পুস্তকটি।
- ঈশ্বর চন্দ্রের পান্ডিত্য ইংরেজদের খুব মনোমুগ্ধকর ছিল, তাই প্রত্যেক কাজে তারা ঈশ্বরের উপস্থিতি প্রার্থনা করতেন।১৮৫৩ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভেঙে বোর্ড অফ এক্সামিনারস গঠিত হলে তিনি তার সদস্য মনোনীত হন।
- তাঁর এই উতাল পাতাল কর্মজীবনের মধ্যে দেখা দিলো আবার নতুন এক আন্দোলন। মা ভগবতী দেবীর সমস্ত কথা ঈশ্বরের কাছে ভগবানের বাণী তুল্য ছিল। মা ঈশ্বর কে একদিন চাক্ষুস করলেন গ্রাম বাংলার নোংরা কুসংস্কারের আচ্ছন্নে আচ্ছাদিত সেই সমস্ত মা বোনেদের সাথে যারা পুতুল খেলার বয়সে হারিয়েছিলেন স্বামী, হয়েছিলেন বিধবা।তাদের জীবনের পীড়া মা ভগবতী দেবীর বুকে সদা কষ্টের সঞ্চার করতো। ঈশ্বর মা কে বড্ড ভালোবাসতেন, তার চোখের জল আর কচি বয়সে বিধবা হওয়া মা বোনেদের যন্ত্রনা তাকে নতুন যুদ্ধের সম্মুখীন করল। শুরু হলো যুদ্ধ, বিধবা বিবাহের পক্ষে ,বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে ।
- ঈশ্বর জানতেন ইংরেজ কর্তৃক আইন প্রণীত না হলে কোনো মোটেই এই নোংরা খেলা বন্ধ হবে না। তিনি জানতেন এ কাজ কখনোই সহজ হবে না। তৎকালীন নিরক্ষর সমাজের চালিকাশক্তি গোড়া ব্রাম্হনের দল কখনোই এ আন্দোলনকে সমর্থন করবে না। তবুও তিনি শুরু করলেন তার নতুন যুদ্ধ আর ও একবার সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে।
বিধবা বিবাহ বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ:
- ১৮৫৪ সালে তত্ববোধিনী পত্রিকাতে বিধবা বিবাহ উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন। পরের বছর প্রকাশিত হল এতদ্বিষয়ক প্রথম পুস্তক। এই বছরের এপ্রিল মাসে নববর্ষের দিন তিনি বাংলা শিক্ষাকে উপহার দিলেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য “বর্ণপরিচয়”
- চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শাস্ত্রীয় প্রমান সহ রচনা করলেন বিধবা বিবাহ প্রবর্তন হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক দ্বিতীয় প্রবন্ধ। এবার আরো জোরালো হল আন্দোলন, বিধবা বিবাহ আইন সম্মত করতে তিনি বহুসাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্র পেশ করলেন ইংরেজ সরকারের কাছে।
- অবশেষে বহু আন্দোলন, বহু বিক্ষোভ, বহু ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার পর ১৮৫৬ সালে ১৬ ই জুলাই সরকারি ভাবে প্রণীত হল বিধবা বিবাহ আইন। আর প্রথম বিধবা বিবাহ সম্পন্ন হল তার বন্ধু শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন মহাশয়ের সহিত বর্ধমান জেলা নিবাসী ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দ্বাদশ বর্ষীয়া বিধবা কন্যা কালীমতীর।পরবর্তীকালের তিনি নিজের সন্তান নারায়ণচন্দ্রের ও বিবাহ দিয়েছিলেন এক বিধবার সহিত।
১৮৫৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তার পরিচালন সমিতির ৩৯ জন সদস্যের মধ্যে একমাত্র ভারতীয় সদস্য নির্বাচিত হন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর।
- তাঁর সরকারি কর্মজীবন হিল খুবই অল্প দিনের। কারণ একটাই ,তিনি নিঃস্বার্থ মনে শুধুমাত্র ভারতীয়দের শিক্ষাদান তথা সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছিলেন এবং তার জন্য যে কোনো রকম আত্মবলিদান করতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন।আর সেটাই হলো, ১৮৫৮ সালে শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তাদের সাথে মতবিরোধ হলে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের কাজে ইস্তফা দিলেন এবং মাত্র ৩৯ বছর বয়সে সরকারের সাথে ছিন্ন করলেন সমস্ত সম্পর্ক। এরপর, তিনি মনে-প্রাণে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জোয়ারে ঝাঁপ দিলেন।
শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে ঈশ্বর চন্দ্রের ভূমিকা:
শিক্ষায়:
বাংলার শিক্ষা সংস্কারে এক অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। তিনি তৎকালীন বাংলার প্রচলিত শিক্ষাধারায় এক আমূল পরিবর্তন আনেন। ততকালীন গোড়া বাংলার শিক্ষা ধারায় কতকগুলি কুসংস্কার এবং দুর্ভেদ্য ধারা প্রচলিত ছিল যার পরিবর্তন না হলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে শিক্ষা গ্রহণ করা কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না।
- ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন শিক্ষার উদ্দেশ্যে।একদিকে নিজ মেধার গুনে তিনি যেমন “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেছিলেন, তেমনি তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষা কে সমাজে সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এবং সকলকে শিক্ষিত করে তুলতে।
- আর সেই উদ্দেশ্যে তিনি প্রচলিত শিক্ষা ধারায় কতকগুলি পরিবর্তন আনেন, খুব স্বাভাবিক এই সংস্কার তৎকালীন বাংলায় সহজ ছিল না। তবুও শিক্ষা সংস্কারে তিনি কোনোদিন পিছুপা হননি। সেই সময়ে প্রায় প্রতিটি নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে ছিল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম।
অধ্যক্ষের দায়িত্ব:
- ১৮৫১ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ও সহকারী সেক্রেটারি পদে অভিভূত হন এবং কিছুদিন পরে ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বও গ্রহণ করেন । তৎকালীন বাংলায় কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য পরিবারের সন্তানরা সংস্কৃত কলেজে পড়ার সুযোগ পেত, অন্য ঘরের সন্তানদের জন্য ছিল সংস্কৃত কলজের দ্বার বন্ধ, আর এখানেই ছিল তাঁর প্রথম সংস্কার। তিনি ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য পরিবার বাদেও সমাজের সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সংস্কৃত কলেজের দ্বার খুলে দেন, সকল বর্ণের মানুষকে সেখানে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেন।
- পূর্বে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে কোনোরূপ দক্ষিণ নেওয়া হতো না। যার ফলে কলেজের ব্যয়ভার পুরোপুরিভাবে সরকারের হস্তে এবং ফলস্বরূপ কলেজের সংস্কারে সরকার গুরুত্ব না দেওয়া অবধি গতি হতো না। বিদ্যাসাগর মহাশয় এ বিষয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করলেন এবং ঠিক করলেন এবার থেকে ছাত্রদের কাছ থেকে দক্ষিণা নেওয়া হবে। ১৮৫২ সালের অগাস্ট মাস থেকে কলেজ প্রবেসরথি দের কাছে থেকে ২ টাকা দক্ষিণা নেওয়ার প্রথা চালু হয়।
- তৎকালীন বিভিন্ন জটিল সংস্কৃত গ্রন্থের ভাবানুবাদ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহজ ভাষায় শিক্ষা গ্রহণে তিনি অভূতপূর্ব সুযোগ করে দেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে শিক্ষা পৌঁছে দিতে তিনি নিজে উদ্যোগী হন। ১৮৪৭ সালে সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি নামে একটি বইয়ের দোকান খোলেন যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃত গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্ৰকাশ করতেন যাতে শিক্ষার্থীরা সেগুলো খুব সহজেই সেই সকল দুর্ভেদ্য সংস্কৃতে মোর গ্রন্থের পাঠ সহজ ভাষায় গ্রহণ করতে পারে।
সমাজ সংস্কারে:
- ১৮৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বারানসি ও বালানটাইন সংস্কৃত কলেজের একটি রিপোর্ট পেশ করেন বিদ্যাসাগর মহাশয়, যেটি বাংলার শিক্ষার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দলিল।
- নিজের গ্রামের হত-দরিদ্র ঘরের ছেলে মেয়েরা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগেবীরাসিংহে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়।
- ১৮৫৫ সালে নববর্ষের দিন তিনি বাঙালিকে উপহার দেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক “বর্ণপরিচয়”, বর্ণমালা শিক্ষাগ্রন্থ শিশুপাঠ্য।এই পুস্তকে তাঁর প্রচলিত লিপিগুলিই আজও বাংলা ভাষায় ব্যাবহৃত ও সমরূপে আদৃত হয়ে আছে।
- চলতি বছরে কিছুদিন বাদে বিদ্যাসাগর মহাশয় সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ ছাড়াও দক্ষিণ বঙ্গ সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে অধীনস্থ হন।দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বিদ্যালয় পরিদর্শনের পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি নদীয়া,বর্ধমান, মেদিনীপুর ও হুগলি জেলাগুলিতে একাধিক মডেল স্কুল বা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
- বিদ্যাসাগর মহাশয় কেবলমাত্র শিক্ষা সংস্কারেই থেমে থাকেননি ,তিনি বিশেষভাবে উপলব্ধি করেন সমাজ তথা সভ্যতার উন্নতির জন্য এবং সকল ভারতবাসীর মধ্যে শিক্ষার বীজ বপন করতে হলে নারী শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। আর সেযুগে নারী শিক্ষার কোনো স্থান ছিল না সমাজে। তাই এবার মহাশয় নারী শিক্ষার কাজে ব্রতী হলেন।তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে যেমন আন্দোলনের প্রয়োজন তেমনি সাথে সাথে নারী শিক্ষারও প্রয়োজন, সমাজের সকল অবহেলিত, নির্যাতিত নারীদের শিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন।
নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান:
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং ড্রিন্কবাটের বিটন উদ্যোগে হয়ে নারী শিক্ষার হেতু প্রচুর বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে কলকাতায় প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনা করলেন।এটি ছিল ভারতের প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয়।
- শুধু শহরে নয় গ্রামাঞ্চলে নারী শিক্ষার কাজে ব্রতী হয়ে বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে স্থাপনা করে চললেন স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নি সম্মিলনী।
- ১৮৫৮ সালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয়ের শুভারম্ভ করে ফেললেন, যেখানে মোট ১৩০০ জন ছাত্রীরা পড়াশুনো করত। তিনি সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই সকল বিদ্যালয়ের স্থাপনা করেছিলেন,পরে অবশ্য অনেক তদারকি করার ফলে সরকার এই সব স্কুলগুলির ভরন- পোষণের সামান্য দায়িত্ব কাঁধে নেন।
- এমনই ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়, শুধুমাত্র সমাজ কে শিক্ষিত করে তুলতে, নারীদের শিক্ষিত করতে নিজের সর্বস্য দেন করে সরকারের অপেক্ষায় না থেকে তৈরী করে ফেললেন কতকগুলি বিদ্যালয়। তিনি গ্রামে মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভগবতী বিদ্যালয় নামে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের স্থাপনাও করেছিলেন।
বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন:
হিন্দু সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এবং অবাস্তব ও ভন্ড রীতিনীতির প্রবল বিরোধী ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। প্রাচ্য সংস্কৃত ব্যাকরণের পন্ডিত হলেও পাশ্চাত্য শিক্ষাধারা এবং চিতাধারার প্রবল সমর্থক ছিলেন তিনি।
- তৎকালীন গোড়া বাংলার দুর্ভেদ্য রীতিনীতি থেকে নারীদের মুক্ত করতে সদা সচেষ্ট ছিলেন তিনি। নারী মুক্তির পথে বারংবার বিভিন্ন সচেতনকারী পুস্তক প্রকাশনা তথা সক্রিয় আন্দোলনেও নেমেছিলেন তিনি।
- তার প্রবল জেদি মনোভাব এবং আন্দোলনের ফলস্বরূপ অবশেষে ১৮৫৬ সালের জুলাই মাসে সরকারি ভাবে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। এই যুগান্তকারী আইন সমাজের সেই সকল নারীদের মুক্ত করে দেয় যারা বিধবা হয়ে লাঞ্চিত, অবহেলিত হয়ে জীবনযাপন করছিলো।
- বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়নের ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। নিজ হাতে তিনি কতকগুলি বিধবা বিবাহ সম্পন্ন করেন এমনকি নিজ পুত্র নারায়ণ চন্দ্রের ও বিবাহ দেন এক অভাগিনী বিধবার সাথে।
- বিধবা বিবাহ প্রচলের সাথে সাথে বাল্যবিবাহ তথা বহুবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ কে সমাজ থেকে মুছে ফেলতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
চরিত্র:
নিজ মেধা গুনে তিনি যেমন “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন তেমনি হতদরিদ্র গরিব অভাগা লোকেদের সাহায্য করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আপামর জনসাধারণের কাছে “দয়ারসাগর” , কোনোদিন এমন হয়নি কেউ তার কাছে সাহায্য চাইতে এসে খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন। তিনি সর্বদা মানুষের সাহায্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন।এর জন্য তিনি কোনো সরকরি সাহায্যের তোয়াক্কা করতেন না, বরং নিজেই উদ্যোগী হয়ে নিজের টাকা খরচ করে তিনি গরিবের সেবা করতেন।
কত গরিব বালক তার নিকট সাহায্য পেয়ে শিক্ষা গ্রহণ ও পড়াশোনা চালাতো। দুর্ভিক্ষ অনাহারের সময় তিনি নিজ অর্থ খরচ করে অন্নসত্র খুলতেন এবং সেখানে গরিব মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন।
১৮৬৪ সালের শেষের দিকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফ্রান্স এ বসবাস করছিলেন এবং কোনো কারণে তিনি সেখানে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদ্যাসাগর মহাশয়এর নিকট অর্থসাহায্য চাইলে তিনি বিনা দ্বিধায় মধুসূদনের উদ্দেশ্যে ১৫০০ টাকা প্রেরণ করেন এবং তাঁকে ঋণমুক্ত করেন।
ঈশ্বর চন্দ্র তাঁর মাকে খুব ভালোবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন।শোনা যায় তাঁরই অনুরোধে তিনি সমাজ সংস্কার তথা শিক্ষা সংস্কার এবং তাঁরই আদেশে নারী মুক্তি আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান:
বিশ্ববরেণ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলে অভিহিত করেছেন।
বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবের বহুকাল পূর্বেই যদিও বাংলা গদ্যের সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু সে সকল গদ্য সাহিত্যে না ছিল কোনো শিল্প নৈপুণ্যতা আর না ছিল সরস সংলগ্ন বাক্য সমষ্টি। বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রথম বাংলা সাহিত্যে মধুরতা ও ছন্দের সম্বনয়ে বাংলা সাধ্য ভাষার সাথে প্রয়োজনে চলিত ভাষা সংমিশ্রণ করে রসময় এবং শৈল্পিক গদ্যের রচনা করেন। এই কারণে তাকে বাংলা গদ্যের নব জন্মদাতা বলা যেতে পারে।
ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনাসমগ্র:
বিদ্যাসাগর মহাশয়ের শিক্ষামূলক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “বর্ণপরিচয়” যা একটি শিক্ষামূলক শিশুপাঠ্য। এই শিশুপাঠ্য আজও বাংলার ঘরে ঘরে সমরূপে আদৃত হয়ে আছে। এছাড়া তিনি রচনা করেন “ঋজুপাঠ”, “ব্যাকরণ কৌমদী”
অনুবাদ গ্রন্থ:
বিদ্যাসাগর মহাশয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংস্কৃত ও ইংরেজি গ্রন্থের স্বাদ আহরণের সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলি বাংলায় অনুবাদ করতে শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে তিনি স্থাপনা করেন সংস্কৃত প্রেস যন্ত্র নামে একটি ছাপাখানা। এই বছরে এপ্রিল মাসে প্রকাশ করেন হিন্দি “বেতাল পচ্চিসী” অবলম্বনে বাংলা অনুবাদ “বেতাল পঞ্চবিংশতি”
পরবর্তীকালে কালিদাস “অভিজ্ঞানশকুন্তলাম” গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেন “শকুন্তলা” নামে ,ভবভূতির উত্তর রামচরিত এবং বাল্মীকি রামাযানের কাহিনী অবলম্বনে রচনা করেন “সীতার বনবাস”
তাঁর ইংরেজি থেকে অনুবাদমূলক গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৮৪৮ সালে মার্শম্যানের হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল অবলম্বনে রচিত বাংলার ইতিহাস, ১৮৫৬ সালে ঈশপের কাহিনী অবলম্বনে রচিত “কথামালা”, এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৮৬৯ সালে শেক্সপীয়ার এর কমেডি অফ এররর্স অবলম্বনে রচিত “ভ্রান্তিবিলাস”
তাঁর নিজে রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব, বহুবিবাহ রোহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব ,”ব্রজবিলাস”, “রত্নপরিক্ষা”, “জীবন চরিত্” ইত্যাদি গ্রন্থ সকল।
শেষ জীবন:
পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাংলার নবজাগরণের এক অন্যতম নায়ক তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশে। একদিকে কর্মজীবনে তাঁর জেদি চারিত্রিক মনোভাব এবং অন্যদিকে মা-বাবা তথা গরিব মানুষের প্রতি অশেষ করুণা তাঁকে অমর করে রেখেছে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে।
শেষ জীবনে তিনি কলকাতার বাদুড়বাগান বাড়িতে অবস্থান শুরু করেন। এই সময়েও তিনি কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। আসলে বিদ্যাসাগর মহাশয় এবং শিক্ষা কে কোনোদিনই আলাদাভাবে কল্পনা করা যায় না।
তিনি ১৮৯১ সালে ২৯ ই জুলাই তারিখে ৭০ বছর বয়সে তাঁর বাদুড়বাগানস্থ বাড়িতে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন।
বাংলা রচনায় তাঁর অবদান, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীকরণে এবং শিক্ষা ব্যাবস্থায় নতুনত্ব প্রবর্তনে এবং নারী শিক্ষা ও নারী মুক্তি আন্দোলনে তার অসীম অবদান মানব সমাজ কোনোদিনই ভুলতে পারবে না।
বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্মৃতিরক্ষায় মেদিনীপুর জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এছাড়া রাজধানী কলকাতায় তার স্মৃতি রক্ষায় তৈরী করা হয়েছে বিদ্যাসাগর সেতু।
বাঙালি সমাজ ও শিখায় তাঁর পাশ্চাত্য চিন্তা-ভাবনার দরুন আমরা একটি আধুনিক সমাজ উপহার পেয়েছি। তা না হলে, হয়ত আমরা কত বর্ষ পিছিয়ে থাকতাম দুনিয়ার থেকে, বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। তাই তাঁর অবদান কোনোদিনই ভুলতে পারবো না, প্রত্যেক বাঙালির বুকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্মৃতির একটি নির্দিষ্ট স্থান সারাজীবন রক্ষিত থাকবে।
Read More:- Tulshi Plant Can Predict Future | তুলসি চাষ বদলে দেয় জীবন, বছরে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন আপনিও !