Mikhail Gorbachev: কে এই রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ? | কলঙ্কিত নায়ক’ নাকি ‘গণতন্ত্রের পূজারী’,

Mikhail Gorbachev

Mikhail Gorbachev: কে এই রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ? | কলঙ্কিত নায়ক’ নাকি ‘গণতন্ত্রের পূজারী’,: রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ পরিচিত ছিলেন ‘গণতন্ত্রের পূজারী’ হিসেবে। যার আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ১৫ টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।তাঁর আমলেই আমেরিকার সাথে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কমানো ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা কমানোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

  • ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী চিন্ময়ানন্দের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। ১৯৯০ সালে পেয়েছিলেন ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের একদিকে সমর্থক আবার আরেকদিকে কঠোর সমালোচকও।
  • ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন গর্বাচেভ। তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে এসেছিলেন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।
  • মিখাইক গর্বাচেভ ১৯৩১ সালে উত্তর ককেশাস অঞ্চলের স্টেভরপোলে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১১ বছর, তখন জার্মান বাহিনী তাদের গ্রাম দখল করে নেয়। জার্মান সেনাদের নির্যাতন ও গ্রামের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা তার মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের জন্ম দেয়।

Mikhail Gorbachev: কে এই রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ? 

Mikhail Gorbachev Biography | Biography Online

আইন বিষয়ে পড়তে ১৯৫০ সালে তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন।

  • আইন বিষয়ে ভালো জ্ঞান আর দক্ষতার কারণে ১৯৮০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কনিষ্ঠতম পলিটব্যুরো সদস্য নিযুক্ত হন।
  • ১৯৮৫ সালে পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পান। গর্বাচেভ তার পূর্বসূরীদের তুলনায় ছিলেন তরুণ এবং সক্রিয়।
  • তিনি সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন।
  • হাসি ও মনোযোগ দ্বারা মানুষের সংঘবদ্ধ করতেন।
  • তখন সমাজতন্ত্রের পরাশক্তির নতুন নেতাকে এভাবেই টেলিভিশনে উপস্থাপন করা হতো।

‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরেস্ত্রইকা’ নামে দুটি সংস্কার নীতি 

কলঙ্কিত নায়ক' নাকি 'গণতন্ত্রের পূজারী', কে এই মিখাইল গর্বাচেভ?

তিনি ‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরেস্ত্রইকা’ নামে দুটি সংস্কার নীতি চালু করেন।

  • ‘পেরেস্ত্রইকা’ হল গর্বাচেভের একটি অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি, যার উদ্দেশ্য অর্থনীতিকে বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে দিয়ে একটি অবাধ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
  • অন্যদিকে ‘গ্লাসনস্ত’ হল তার একটি রাজনৈতিক কর্মসুচি, যার উদ্দেশ্য নাগরিকের ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করা।
  • তার এই নীতি গণতন্ত্রের এক নতুন দ্বারকে উন্মোচন করে এবং বহু কারাবন্দী গণতান্ত্রিক নেতার মুক্তি নিশ্চিত করে। (Mikhail Gorbachev)

চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়

Mikhail Gorbachev – Biographical - NobelPrize.org

গর্বাচেভ বুঝতে পারেন যে, প্রতিরক্ষায় ব্যয়বহুল বাজেট দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

  • তাই বিশ্বনেতাদের কাছে সম্পর্ক বাড়াতে লাগলেন মিখাইল।
  • ঠান্ডা যুদ্ধে ইতি টানতে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়,ইন্টারমিডিয়েট নিউক্লিয়ার ফোর্স ট্রিটি।
  • তাতে স্থির হয়, ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে অর্থাৎ মাঝারি পাল্লার কোনও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে না দু’পক্ষ।
  • চিরাচরিত এবং পরমাণু, দু’ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের উপরেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
  • ওই চুক্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র কমানো ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা কমানোর শর্ত যুক্ত করেন।

দ্য স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি

চার বছর পর গর্বাচেভ জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে দ্য স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি নামের আরেকটি চুক্তি করেন।

  • যাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার কমে যায়। এরপর ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে।
  • মারা যান ৩২ জন।এই বিপর্যয়ের কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতি গর্বাচেভের ঘৃণা বৃদ্ধি হয়।
  • যার জেরে ১৬ দিন জনসমক্ষে আসেননি গর্বাচেভ।
  • গর্বাচেভের সময়ই আফগানিস্তানে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

গর্বাচেভের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান

শীতলযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ অবসান ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ১৯৯০ সালে শান্তিতে নোবেল পান মিখাইল গর্বাচেভ।

  • আবার এই মানুষটিই এক বছর পর ১৯৯১ সালে বাল্টিক দেশগুলোর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মাটিতে মিশিয়ে দিতে দেশগুলোতে সামরিক ট্যাঙ্ক পাঠান।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছিল।
  • ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ১৫ টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৯১ সালে গর্বাচেভের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়।
  • অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলেও কমিউনস্ট পার্টির ‘পলিটব্যুরো’ সদস্য পদ হারান।  (Mikhail Gorbachev)

আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এজেন্ট

সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে। সাংবাদিকরা বলতে শুরু করেন, “সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন একটা ষড়যন্ত্রের ফল।

  • ষড়যন্ত্রের হোতা মিখাইল গর্বাচভ; তিনি আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এজেন্ট।
  • তিনি নিজের চারপাশে যেসব লোককে জড়ো করেছিলেন, তাঁরাও সবাই ছিলেন পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বের ঠিকাদার।
  • এই ঠিকাদার চক্র আমেরিকা ও তার পুঁজিবাদী মিত্রদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙেছে।
  • নইলে দেশটির পতনের কোনো কারণ ছিল না।” দেশের অভ্যন্তরে অভিযোগ উঠল তিনি নাকি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের বিলোপ ঘটিয়েছেন!!  (Mikhail Gorbachev)

ইয়েলৎসিনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

তিনি পশ্চিমা দুনিয়ার হাততালি পেয়ে ভুলে গেছেন তিনি কাদের প্রেসিডেন্ট।

  • কমিউনিস্ট পার্টি, সেনাবাহিনী, কেজিবি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেকে গর্বাচভের পাশ থেকে সরে গেলেন।
  • সেসময় ইয়েলৎসিন নামে এক নেতা ধীরেধীরে জনপ্রিয়তা অর্জন করছিলেন।
  • তাঁর জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে গেল। লোকজন ভাবতে শুরু করল, এই লোকটিই তাদের ‘ত্রাণকর্তা’।
  • ইয়েলৎসিনই এই দুর্দশা থেকে তাদের উদ্ধার করতে পারবেন।
  • ১৯৯১ সালের জুন মাসে তাই রুশ প্রজাতন্ত্রের ভোটাররা গর্বাচেভের জায়গায় ইয়েলৎসিনকে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করল।
  • গর্বাচেভের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বে চার দশক ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি হল।

মানুষের কাছে তিনি ‘গণতন্ত্রের পূজারী’

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে গর্বাচেভ আখ্যায়িত হন ইতিহাসের এক ‘কলঙ্কিত নায়ক’ হিসাবে। কিন্তু বিশ্বের একটা বড় অংশের মানুষের কাছে তিনি ‘গণতন্ত্রের পূজারী’।

  • বার্লিন প্রাচীরের পতন রোধে তিনি শক্তি প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার সিদ্ধান্ত ছিল এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যেতে পারে।
  • ঠান্ডা যুদ্ধের দুনিয়ায় বার্লিন প্রাচীর তখন একটা প্রতীক। পশ্চিমে গণতন্ত্র, শান্তি। পূর্বে দারিদ্র ও একনায়কতন্ত্র।
  • প্রাচীর তৈরির পরই পশ্চিম বার্লিনে দাঁড়িয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি বলেছিলেন, “আমি নিজেকে বার্লিনের নাগরিক মনে করি।
  • এই দুনিয়ায় মুক্ত মানুষ মানেই বার্লিনের লোক।”  (Mikhail Gorbachev)

গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল

১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মোটে ৫ শতাংশ।

  • তারপর ২০০১ সালে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ রাশিয়া ও ২০০৭ সালে ইউনিয়ন অফ সোস্যাল ডেমক্রেটের মাধ্যমে তিনি আবারো রাশিয়ার রাজনীতিতে আসেন।
  • কিন্তু তিনি সফল হতে পারেন নি।বিশ্বের পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করতে তিনি ‘গ্রিন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯১ বছর বয়সে মারা গেলেন গর্বাচেভ।
  • অবসান হল একটি যুগের। বিবিসি সূত্রে খবর ৩০ অগস্ট রাতে মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতালে মারা যান গর্বাচেভ।  (Mikhail Gorbachev)

মিখাইল গর্বাচেভ একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক

মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

  • গর্বাচেভের মৃত্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বা ইইউ এর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডান লেন বলেন,
  • “বিশ্ব একজন বিশ্বস্ত নেতাকে হারালো।গর্বাচেভ মুক্ত ইউরোপের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।”
  • জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গর্বাচেভ ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছিলেন।”
  • মিখাইল গর্বাচেভ একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। বিশ্ব একজন শক্তিশালী বিশ্বনেতা, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং শান্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমকারী নেতাকে হারালো।
  • সূত্রের খবর গর্বাচেভকে মস্কোর নভোদেভিচি সমাধিক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী রাইসার পাশে সমাহিত করা হবে।
  • লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৯৯ সালে মারা যান। এই সমাধিক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রথিতযশা বহু ব্যক্তিকে সমাহিত করা হয়েছে।

Read More: SBI SCO Recruitment 2022 | 714 Vacancies For Graduate Indians | Age Limit, Selection Processes, Application Fees, Salary

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles