Purulia District Details Description | Know Your Own District | Daily GK Update for All Competitive Exam Syllabus

Purulia District Details Description

Purulia District Details Description | Know Your Own District | Daily GK Update for All Competitive Exam Syllabus: পুরুলিয়ার স্থানীয় নাম পুরুলো। পুরুলিয়ার পূর্বের নাম ছিল ‘মানভূম’। মান রাজবংশের নামে এই নাম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। আবার অন্যমতে প্রাচীন ‘মান’ জনগোষ্ঠীর বাসভূমি বলেই এই অঞ্চলের এইরূপ নামকরণ। ১৮৩৮ সালে পুরুলিয়া মানভূম জেলার সদর মহকুমা হয়। বিহারের ছোটনাগপুর ডিভিশনের অন্তর্ভুক্ত ছিল মানভূম। পুরুলিয়া জেলা গঠিত হয় ১৯৫৬ সালে।

Purulia District Details Description: পুরুলিয়া জেলার ইতিহাস

Location of Purulia district and demarcation of different levels of... |  Download Scientific Diagram

  • মধ্যযুগে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গের অঙ্গীভূত ছিল পুরুলিয়া। জৈন ধর্মাবলম্বীদের আচারাঙ্গসুত্ত গ্রন্থে, বজ্রভূমি নামে এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায়।
  • জৈনদের ২৪-তম তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীর এখানে এসেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে।
  • অনেকগুলি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল বজ্রভূমির আদি বাসিন্দারা। এদের মধ্যে
  • উল্লেখযোগ্য ছিল কুর্মি, সাঁওতাল, ভূমিজ, বাউরি, কোরা, মাহালি, মুণ্ডা প্রভৃতি। এরা যে
  • গ্রামগুলিতে থাকতেন তার প্রত্যেকটির ‘মুন্ডা’ নামে একজন গ্রামপ্রধান ছিলেন।
  • প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য বা আদি অস্ট্রালে বর্ণিত নিষাদ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। কুর্মি, সাঁওতাল, বাউরি ও ভূমিজরা আজও পুরুলিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।
  • পশ্চিমবঙ্গের তিনটি প্রধান নদীর উৎপত্তিস্থান এই জেলা।  (Purulia District Details Description)

নদীগুলি হল কংসাবতী বা কাঁসাই (ঝালদার নিকট মুরগুমার জাবড় পাহাড়ে এর উৎপত্তি), দ্বারকেশ্বর বা ধলকিশোর (তিলবনী পাহাড় থেকে উৎপত্তি) এবং শিলাবতী বা শিলাই (ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপত্তি)।

  • জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী কাঁসাই। বর্ষায় বাণ ডাকে নদীগুলিতে। আবার গ্রীষ্ম এবং শীতকালে এরা শুকিয়ে যায়। বিহার রাজ্যের সঙ্গে পুরুলিয়ার সীমানা চিহ্নিত করেছে সাঁওতালডি থেকে পাঞ্চেত জলাধার পর্যন্ত দামোদর।
  • পুরুলিয়ার অরণ্য অঞ্চল সীমাবদ্ধ পাঁঞ্জেৎ, অযোধ্যা, দলমা এবং বাগমুন্ডির উচ্চভূমিতে।

এছাড়া কিছু অরণ্য দেখা যায় শিলাই, দারকেশ্বর, কাঁসাই এবং আরকুশা উপত্যকায়। এই অরণ্যগুলিতে শাল গাছের প্রাধান্য দেখা যায়।

একনজরে পুরুলিয়া জেলা

জেলায় অর্থনৈতিক উপার্জন বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের |  Eai Banglai

স্থাপনকাল: ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর।

ভৌগোলিক অবস্থান: উত্তর অক্ষাংশ ২৩°৪২’ এবং ২২°৪৩′-এর মধ্যে বিস্তৃত এবং দ্রাঘিমাংশ ৮৬°৫৪´ পূর্ব থেকে ৮৫°৪৯′ পূর্বের মধ্যে অবস্থিত।  (Purulia District Details Description)

সীমানা : উত্তরে ঝাড়খন্ডের ধানবাদ, দক্ষিণে ঝাড়খন্ড ও ঝাড়গ্রাম, পূর্বে বাঁকুড়া ও উত্তর-পূর্বে পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিমে ঝাড়খন্ডের হাজারিবাগ।

আয়তন: ৬,২৫৯ বর্গকিমি।

জেলা সদর: পুরুলিয়া।

মহকুমার সংখ্যা

পুরুলিয়া জেলা - উইকিভ্রমণ

৩টি। পুরুলিয়া সদর পূর্ব, পুরুলিয়া সদর পশ্চিম ও রঘুনাথপুর

ভূ-প্রকৃতি ও মৃত্তিকা : জেলার পূর্বাংশ প্রস্তরযুক্ত সমতলভূমি ও পশ্চিমাংশ নিম্ন মালভূমি।

  • সমতলভূমিকে ‘টাড়’ ও অপেক্ষাকৃত উচ্চভূমিকে ‘ডি’ বলা হয়। ছোটনাগপুর মালভূমির বৈশিষ্ট্য ছড়ানো পুরুলিয়া জেলায়।
  • পকোট বা পাঁচেট অঞ্চলটি অবস্থিত উত্তরে কয়লাখনি প্রধান গন্ডোয়ানা অববাহিকার মধ্যে। এখানে কয়লা ছাড়া লোহা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি খনিজ পাওয়া যায়।
  • পুরুলিয়া শহর থেকে ২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অযোধ্যা পাহাড়। এর উচ্চতম শৃঙ্গ গোগাবুরু বা গঙ্গাবুরু (উচ্চতা ২, ২২০ ফুট)।
  • এই পাহাড় জলবিভাজিকার রূপ নিয়েছে কাঁসাই ও সুবর্ণরেখা নদার মধ্যে। কমবেশি জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়টি। দক্ষিণে দলমা এবং বাঘমুণ্ডি শৈলশ্রেণি সামান্য পশ্চিম ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।
  • নাইস, গ্র্যানাইট ও ল্যাটেরাইট দ্বারা গঠিত জেলার পশ্চিমাংশের পাহাড়ি অঞ্চল। পুরুলিয়া হল পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে খনিজ সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলা। পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক মালভূমি পুরুলিয়া জেলায়।

জলবায়ু: শুষ্ক প্রকৃতির এবং চরমভাবাপন্ন। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১২০০-১৩৫০ মিলি মিটার।

উদ্ভূতা: সর্বোচ্চ ৪৫° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ৯° সেলসিয়াস।

পাহাড় পর্বত

বাংলার অজানা ইতিহাস: পুরুলিয়া জেলা » বাংলা খবর।

অযোধ্যা, বাগমুন্ডি, পরশ পাহাড়, জয়চন্ডী, জাবড় পাহাড়, গুরুমা পাহাড়, জয়ন্তী পাহাড় (সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আছে এখানে) ও পাঞ্চেত (উচ্চতা ২,১১০ ফুট)।  (Purulia District Details Description)

  • পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অযোধ্যা পাহাড়ের গোর্গাবুরু এই জেলাতেই অবস্থিত। গোগাবুরু ৬৭৭ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন।
  • অযোধ্যা পাহাড় দলমা পাহাড়ের অংশবিশেষ এবং পূর্বঘাট পর্বতমালার বর্ধিতাংশ। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চেমতাবুরু।
  • জেলার দক্ষিণে দলমা এবং কেন্দ্রে সামান্য পশ্চিম ঘেঁষে বাগমুন্ডি শৈলশ্রেণি দাঁড়িয়ে আছে।

নদ-নদী

Purulia-পুরুলিয়া জেলা telah... - Purulia-পুরুলিয়া জেলা

প্রধান নদী কাঁসাই বা কংসাবতী, শিলাবতী বা শিলাই, কুমারী, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, সুবর্ণরেখা, টটকো।

  • এর মধ্যে কংসাবতী, শিলাবতী, দারকেশ্বর এবং কুমারী এই জেলা থেকেই সৃষ্টি।
  • অন্যান্য শাখা নদী: কাবরু, হনুমতা, গুরাই, জাম, কুদুল, শোভা, চাকা, বান্দু, পাতলই, রুপাই, শালদা, পাঁড়গা, বেকো, উতলা, সোনা, নেংসাই, হাড়াই, কদমদা, তারা, কেরবো, আমুর হাসা ইত্যাদি।
  • নদীগুলো শীত-গ্রীষ্মে মরাখাত, বর্ষায় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

জলপ্রপাত: পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহাড়ে বামনী জলপ্রপাত ও তুর্গা জলপ্রপাত বিখ্যাত।

উল্লেখযোগ্য বাঁধ প্রকল্প

দামোদর নদের উপর ১৯৫৯ সালে নির্মিত ‘পাঞ্চেত বাঁধ’ এবং কংসাবতী নদীর ওপর ‘শাহরাজ্যের বাঁধ’ এই জেলাতেই নির্মিত হয়েছে। চড়িদার কাছেই কায়রাবেড়া সেচ প্রকল্প ও জলাধার। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম।

অভয়ারণ্য: ১টি। কুইলাপাল অভয়ারণ্য হরিণের জন্য বিখ্যাত। দলমা পাহাড় বন্য হাতির জন্য বিখ্যাত।

কৃষিজ উৎপাদন: ভুট্টা উৎপাদনে রাজ্যে প্রথম। ধান ও গম উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গে স্বাদশ, দুধ উৎপাদনে সপ্তদশ ও ডিম উৎপাদনে চতুর্দশ স্থান অধিকার করে আছে এই জেলা। এছাড়া তৈলবীজ, ডাল, আলু প্রভৃতির চাষও হয়।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ: শাল, বাবলা, বাঁশ, সাবাই ঘাস, মিসল, শিশু, পলাশ, মহুয়া, শিমূল, পলাশ, মহুয়া, আমলকি, হরিতকি, বহেরা ইত্যাদি।

জনসংখ্যা: ২৯,২৭,৯৬৫ জন। (রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩.১৬ শতাংশ)।

পুরুষ: ১৪,৯৭,৬৫৬ জন। মহিলা : ১৪,৩০,৩০৯ জন।

জনঘনত্ব: প্রতি বর্গ কিমিতে ৪৬৮ জন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: ১৫.৪৩ শতাংশ।

লিঙ্গ অনুপাত: ৯৫৫ জন (প্রতি ১০০০ জন পুরুষে)।

আদিবাসী জনজাতি: এই জেলার কুর্মি, সাঁওতাল, বাউরি ও ভূমিজরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আদিবাসীদের মধ্যে সাঁওতালরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।  (Purulia District Details Description)

সাক্ষরতার হার: মোট ৬৫.৩৮ শতাংশ। পুরুষ ৭৮.৮৫ শতাংশ এবং মহিলা ৫১.২৯ শতাংশ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ১টি বিশ্ববিদ্যালয়। সিধো-কানু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থান ২০১০)।

  • এটি মূলত আদিবাসী শিক্ষার উন্নয়নকল্পে স্থাপিত হয়; বিশেষত স্বদেশি সাঁওতালি ভাষার শিক্ষার প্রসার ঘটানোই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য।

পুরসভা (প্রতিষ্ঠা বছর): ৩টি। পুরুলিয়া (১৮৭৬), ঝালদা (১৮৮৮), রঘুনাথপুর (১৮৮৮)।

গ্রাম পঞ্চায়েত: ১৭০টি।

পঞ্চায়েত সমিতি: ২০টি।

ব্লক: ২০টি। অর্শা, বাগমুন্ডি, বলরামপুর, বড়বাজার, বান্দোয়ান, হুরা, জয়পুর, ফালদা-১, ঝালদা-২, কাশীপুর, মানবাজার,-১, মানবাজার-২, নেতুরিয়া, পারা, পুঞ্ঝা, পুরুলিয়া-১, পুরুলিয়া-২, রঘুনাথপুর-১, রঘুনাথপুর-২, সাঁতুরি।

থানা: ১৬টি।

লোকসভা আসন: ১টি। পুরুলিয়া।

বিধানসভা আসন: ৯টি। বলরামপুর, বন্দোয়ান (তপশিলি উপজাতি), পাড়া (তপশিলি উপজাতি), রঘুনাথপুর (তপশিলি জাতি), কাশীপুর, মানবাজার (তপশিলি উপজাতি), জয়পুর, পুরুলিয়া, বাঘমুণ্ডী।

যোগাযোগ ও পরিবহণ

পর্যটকের ঢল নেমেছে পুরুলিয়ায়, কড়া নজরদারি প্রশাসনের

দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের দ্বারা জেলাটি কলকাতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। জেলার ব্যস্ততম রেলস্টেশন আদ্রা জংশন। এছাড়া পুরুলিয়া স্টেশন থেকেও বহু জায়গার সাথে যোগাযোগ করা হয়। রঘুনাথপুর থানা এলাকায় সবথেকে বেশি রেলস্টেশন আছে। জাতীয় সড়ক NH-32, NH-60A এই জেলার ওপর দিয়ে। গেছে।

খনিজ সম্পদ: এই জেলা খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। কয়লা, চিনামাটি, গ্রানাইট পাথর, ম্যাগনেটাইট, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর ও গালা তৈরির লাক্ষ্মা প্রভৃতি পাওয়া যায়।

বাণিজ্য কেন্দ্র: পুরুলিয়া, আদ্রা, মানবাজার, রঘুনাথপুর

শিল্প

জেলার বড়ো শিল্প বলতে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন। রানিপুর, হিরাখুন, জামুরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে কয়লা তোলা হয়। এই কয়লা খনিগুলি জেলার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।

  • গালা, তসর, বিদ্যুৎ শিল্প ও ইস্পাত কারখানা এখানকার উল্লেখযোগ্য শিল্প। ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে প্রাচীন শিল্প ‘লাক্ষ্মা শিল্প’।
  • এই শিল্প বাঘমুণ্ডি, ঝালদা, বলরামপুর, মানবাজার, রঘুনাথপুর অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।
  • পাড়া, আড়ষা, ঝালদা, চোড়িদা ও সাঁতুড়ি অঞ্চলে পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ-নাচের মুখোশ তৈরি হয়। অসংখ্য মানুষ বিড়ি শিল্পে নিযুক্ত।

অর্থনীতি

পুরুলিয়া জেলার মাটি অনুর্বর এবং জলধারণের ক্ষমতা কম। এই জেলায় জলসেচ খুবই ব্যায়সাপেক্ষ তবুও জেলার জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস কৃষি।

  • সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত কৃষিপণ্য আমন ধান। আম, ডাল, ভুট্টা প্রভৃতিও কিছু কিছু চাষ হয়।

হাসপাতালের সংখ্যা: সরকারী হাসপাতাল ২টি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৭২টি।

গ্রন্থাগারের সংখ্যা: ১২৭টি।

প্রধান উৎসব : রাসপূর্ণিমা, দুর্গাপূজা, বড়দিন, ঝুলনযাত্রা।

জেলার উৎসব

বিভিন্ন আদিবাসী উৎসব, ভাদু উৎসব ইত্যাদি।

ভাদু উৎসব

পয়লা ভাদ্র থেকে শুরু হয়ে মাসের সংক্রান্তির দিনে ভাদু প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় এই উৎসব।

  • লোককথা পুরুলিয়ার কাশিপুরের পঞ্চকোটের রাজা নীলমনি সিংহদেবের কন্যা ছিলেন ভদ্রেশ্বরী। সেখান থেকেই ভাদু। কাশিপুরের রাজকন্যা ভদ্রেশ্বরীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
  • কিন্তু বড় বিয়ে করতে আসার সময় ডাকাতদের কবলে পরে মারা যায়। সেই শোকে ভাদু আত্মঘাতী হন।
  • ভাদুর স্মৃতিকে ধরে রাখতেই কাশিপুরের রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রাজ্যবাসী এই ভাদুর শুরু করেন। আবার কেউ কেউ বলের ভাদ্রমাসে পঞ্চকোট ও ছাতনার রাজার মধ্যে যুদ্ধে পঞ্চকোটের রাজা বিজয়ী হন।
  • সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে এই লোক উৎসবের সূচনা। শুরুর গল্প যাই হোক ভাদু উৎসবের সূচনা কিন্তু পুরুলিয়ার কাশিপুরের রাজবাড়িই।  (Purulia District Details Description)
  • এই উৎসব উপলক্ষ্যে একটি ছোট ছেলে বা মেয়ে ভাদু সেজে কোমরে ভাদুর পুতুল নিয়ে নাচ করে।
  • ঢোল, পাখোয়াজ, খঞ্জনি, হারমোনিয়াম বাজে, আর কোরাস গান—’ও ভাদু নামলো দ্যাশে/আষারি বর্ষর শেষে’। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে এখনও এই কৃষি উৎসব ভাদু গান লেখা হয়।
  • অযোধ্যা পাহাড়ে বৈশাখী পূর্ণিমায় দিশুম সেন্দ্রা বা শিকার উৎসব পালিত হয়।
  • পৌষ সংক্রান্তিতে টুষ পরব পালিত হয়। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে চাকনতোড়ে বসে দাতা পরবের মেলা।

 প্রধান আঞ্চলিক মেলা 

রথযাত্রা, গাজন এবং চড়কের মেলা।

বরাবাজার

পুরুলিয়ার সরবেড়িয়া গ্রামে প্রতি জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখ বীজবপন ও গাজন উৎসব একই সঙ্গে পালিত হয়। বীজবপনকে আবার ‘রোহিণী’ পরবও বলা হয়।

  • কারণ রোহিণী হল নক্ষত্র, যা জ্যৈষ্ঠমাসে বৃষ রাশির অধীনে। উৎসবটি এরূপ- গৃহস্থের বউয়েরা একটি পিতল বা কাঁসার পাত্রে সামান্য ধানের বীজ, একটি হরিতকী, একটি গোটা সুপারী সাজিয়ে রাখেন।
  • অভিজ্ঞ বয়স্ক কৃষক সকালে স্নান সেরে মাঠে গিয়ে ওই বীজ ক্ষেতে ছড়িয়ে দেয়। ঘরে ফেরার সময় ক্ষেতের মাটি নিয়ে ফেরে। তাকে রোহিণী মাটি বলে।  (Purulia District Details Description)
  • পরদিন চড়ক কাঠ পুঁতে গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দেউলঘাটা (পুরুলিয়া শহর থেকে ৩২ কিমি দূরে) : কাঁসাই নদীর তীরে বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের মিলনভূমিতে পলাশ পরবের আসর বসে।

লোকনৃত্য

ছৌ, ঝুমুর গান (সাঁওতাল ও আদিবাসীদের নাচ-গান), নাচনি (নাচের মতো ঐশ্বর্যশালী লোক সংস্কৃতির জন্ম এই জেলায়)। এখানকার ছৌ নাচ (শিল্পী : গম্ভীরা সিং মুরা) পৃথিবী বিখ্যাত।

জঙ্গলমহলের নৃত্য

সারপা নৃত্য, কারাম নৃত্য, বাহা নৃত্য, ভুয়াং নৃত্য, লাংড়ে নৃত্য, মুণ্ডারী নৃত্য, পাইক-ঢালি-রায়বেশে নৃত্য ইত্যাদি।

দর্শনীয় স্থান: দলমা পাহাড়ের কোলে গিধনি ও দুয়ারসিনি নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার স্থান। পাহাড়ী উপত্যকা বেলপাহাড়ি (এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ)।

অন্যান্য আকর্ষণীয় জায়গাগুলো হল: অযোধ্যা পাহাড়ে বাগমুন্ডির পথে বামনী” বা টুরগা ঝরনা, কুইলাপালের অরণ্য ও দেউলঘাটার জৈন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।

  • দলমা পাহাড়ের জঙ্গলে বা বনে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ জাতীয় সরোবরের মর্যাদা লাভ করেছে।
  • এর অপর নাম ‘নিবারণ সায়র’ (স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণ দাশগুপ্তের নামানুসারে)। এখানকার পঞ্চকোট দুর্গ (গড় পঞ্জকোট নামেও খ্যাত) যা ৫০০ বছরের পুরনো স্থাপত্য।
  • এছাড়া জয়চন্ডী পাহাড়, কল্যাণেশ্বরী মন্দির ও পাঞ্চেত বাঁধ প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান।
  • সাঁওতালডিহিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে আছে রাজবাড়ি, তসর কারখানার জন্য রঘুনাথপুর বিখ্যাত।
  • এখানে প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্যারিস্টার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়ী। বর্তমানে সেখানে তাঁর মা নিস্তারিনী দেবীর নামে মহিলা কলেজ স্থাপন করা হয়েছে।

 জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব 

গম্ভীর সিং মুরা (১৯৩০-২০০২) : প্রখ্যাত ছৌ নৃত্যশিল্পী। ১৯৮১ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।

এছাড়াও জেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা হলেন লাবণ্যপ্রভা ঘোষ (মানভূম জননী), চিত্ত মাহাতো (প্রাক্তন রাজনীতিবিদ), বিলাসীবালা সহিস (প্রাক্তন রাজনীতিবিদ) প্রমুখ।

বর্তমান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো (পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন), সন্ধ্যারানি ছুজু (অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী) এই জেলার বাসিন্দা।

এক নজরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী 

  • এই জেলার পশ্চিমাংশ নিম্ন মালভূমি ও পূর্বাংশ প্রস্তরময় সমতল ভূমি। এখানকার সমতল ভূমিকে ‘টাড়’ ও উচ্চভূমিকে ‘ডি’ বলে। পুরুলিয়া উচ্চভূমির অবশিষ্ট পাহাড়গুলিকে বলে ‘ডুংরী’।
  • পুরুলিয়ার উত্তরাংশে পাঞ্চেৎ অবস্থিত। মোঘল আমলে এখানে একটি দুর্গ ছিল।
  • কাঁসাই ও সুবর্ণরেখা নদীর মাঝে গোর্গাবুরু পাহাড় অবস্থিত।  (Purulia District Details Description)
  • পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশের মাটি নাইস, গ্র্যানাইট ও ল্যাটেরাইট দ্বারা গঠিত। এটি ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ।
  • পলিমিশ্রিত ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা একদমই নেই তাই এখানকার মাটি অনুর্বর।
  • খরাপ্রবণ জেলা বলে জলের সমস্যা প্রবল।
  • পাঞ্চেৎ, অযোধ্যা, দলমা ও বাগমুণ্ডি-র শালগাছের অরণ্যই এখানকার প্রধান বনভূমি।
  • রঘুনাথপুরের সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও কলকাতা ঘুরে সেই বিদ্যুৎ এখানে পৌঁছায়।
  •  ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে লাক্ষা শিল্পই প্রাচীন
  • ঝিনুক, শঙ্খ ও নারকেলের ছোবড়া দ্বারা নির্মিত বিভিন্ন দ্রব্য এই জেলায় বিখ্যাত।
  • পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রাম বাংলার হস্তশিল্পের উৎকর্ষের এক উজ্জ্বল নাম। এখানে ছোঁ মুখোশ তৈরি হয়।
  • লোকসংস্কৃতি ছৌ নাচ ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর ‘কালচারাল হেরিটেজ’ স্বীকৃতি প্রাপ্ত
  • পুরুলিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে আকর্ষণীয় জলাভূমি ‘সাহেব বাঁধ’।
  • কেন্দুপাতা দিয়ে বিড়ি তৈরির শিল্প জেলার সব জায়গাতেই আছে।
  • এই জেলার ব্যস্ততম রেল স্টেশন আদ্রা জংশন।
  • জেলার গজপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।
  • পুরুলিয়ায় একটি সৈনিক স্কুল ও রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় আছে।
  • তুর্গা পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্প পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে অবস্থিত। পুরুলিয়ার উটকো নদীতে সোনার সন্ধান পাওয়া গেছে।
  • সম্প্রতি ২০১৮ সালে বিরল ধাতু সিজিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়।

Read More:

  1. MALDA DISTRICT.
  2. BANKURA DISTRICT.
  3. HOOGHLY DISTRICT.
  4. COOCHBEHAR DISTRICT.
  5. HAWRAH DISTRICT.
  6. SOUTH 24 PARGANAS
  7. NORTH 24 PARGANAS
  8. PASCHIM BARDHAMAN
  9. BIRBHUM DISTRICT
  10. NADIA DISTRICT
  11. MURSHIDABAD DISTRICT
  12. PURBA BARDHAMAN DISTRICT

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles