Purba Bardhaman District | A Details Description | Most Important Daily GK 2022 for all Exams

Purba Bardhaman District

Purba Bardhaman District | A Details Description | Most Important Daily GK 2022 for all Exams:- Our State West Bengal Constitutes 23 Districts. Today we will discuss the “Purba Bardhaman District and Its’ heritages. This district contains a vast area along with several tourist places. Many famous poets, dramatists, Essayists, Scientists, and Doctors belong to this district. Burdwan is the main city in this district along with other big and small ones. So, let us read the details of this district.

Purba Bardhaman District: বর্ধমান বিভাগ

[পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলি এই চারটি জেলা নিয়ে বর্ধমান বিভাগ গঠিত]

Hello Friends, welcome back to our channel Smart knowledge. Today’s topic is based on our favorite District Purba Bardhaman. So, all the members of this district along with the others may feel interesting to know the pros and cons of it.


পূর্ব বর্ধমান 

Burdwan I - Wikipedia

(জেলার ইতিহাস)

জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমান মহাবীর প্রথম ধর্ম প্রচার করেছিলেন দামোদর নদের তীরে বর্ধমানে। তাঁরই নামানুসারে এই স্থানের নাম হয়েছে বর্ধমান।

  • প্রাচীনকালে রাঢ় বলা হত গঙ্গার দক্ষিণ ও পশ্চিমভাগের মধ্য অঞ্চলকে। আর আজকের বর্ধমান অবস্থিত ছিল এই প্রাচীন রাঢ়ের প্রায় মধ্যস্থলে।
  • বর্ধমানভুক্তির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় বর্ধমানের মল্লসারুল থেকে প্রাপ্ত খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের একটি তাম্রশাসনে।
  • এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায় গোপচন্দ্র ছিলেন বঙ্গাধিপতি। গোপচন্দ্রের অধীনে সেইসময় বর্ধমানভুক্তির উপরিক বা শাসনকর্তা ছিলেন মহাসামন্ত বিজয় সেন।
  • বর্ধমান জনপদের নাম পাওয়া যায় ‘বৃহৎসংহিতা’, ‘মার্কভেয়’ পুরাণেও।  Purba Bardhaman District

ঈশ্বরী ঘোষ বা ইছাই ঘোষ

বর্ধমান জেলার গোপভূম পরগনায় ঈশ্বরী ঘোষ বা ইছাই ঘোষ নামে জনৈক সামন্ত রাজা পাল যুগের শেষের দিকে তৃতীয় বিগ্রহপালের সময় বঙ্গাধিপতি গৌড়রাজকে উপেক্ষা করে এক স্বাধীন শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

  • তাঁর রাজধানী ছিল বর্তমান কাঁকসা থানার অন্তর্গত শ্যামরূপার গড় অঞ্চলে ঢেকুর নামক স্থানে। ইছাই ঘোষের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। ১৭১১ সালে রচিত ঘনরাম চক্রবর্তীর ‘শ্রীধর্মমঙ্গল’ গ্রন্থে।

অজয় নদ বিহারের সাঁওতাল পরগনা থেকে উৎপত্তি হয়ে জেলার উত্তরাংশে বীরভূমের সীমানা ধরে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে কাটোয়ার উত্তরে ভাগীরথীতে মিশেছে।

  • বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ সীমানা তৈরি করেছে বিহারে উৎপন্ন দামোদর নদীর গতিপথ। জেলার দক্ষিণে হুগলি জেলার সঙ্গে দারকেশ্বর নদী ১০/১২ কিমি সীমানা চিহ্নিত করেছে। জেলার পূর্বাংশে ভাগীরথী-হুগলি প্রবাহিত।

গ্রীষ্মে অজয় ও দামোদর নদীগুলিতে জল প্রায় থাকে না কারণ এই নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট; তাই বর্ষায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।

  • দামোদরকে ‘বাংলার দুঃখ’ বলা হত কারণ এই নদীর দুকুলে আগে ভীষণ বন্যা হত।
  • বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদির সুবিধা হয়েছে দামোদরের প্রধান উপনদী বরাকরের উপর তিলাইয়া বাঁধ, বোকারো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কয়েক কিমি উপরে কোনার নদীতে আর একটি বাঁধ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দামোদরের উপর পাঞ্চেত হিল বাঁধ ও বরাকরের উপর মাইথন বাঁধ তৈরি করে।
  • এই সকল বাঁধের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন-এর। এটি গঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই।
  •  কাঁকসা থানার পূর্বাংশে প্রাচীন পলি ও নতুন পলি গঠিত সমভূমি কৃষিকাজের উপযোগী।
  • অন্যদিকে ল্যাটেরাইট ও গন্ডোয়ানা শিলা দ্বারা গঠিত রুক্ষ-উষর পশ্চিমাংশ কৃষির অনুপযুক্ত।
  • ১৭৭৪ সালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জের এগরা-নারায়ণকুড়িতে সর্বপ্রথম কয়লার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যা পশ্চিমবঙ্গে প্রথম।
  • ১৮৭০ সালে পশ্চিম বর্ধমান নেয়ামতপুর থানার কুলটিতে ইন্ডিয়ান আয়রণ অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি নির্মিত হয়।

   একনজরে পূর্ব বর্ধমান জেলা

স্থাপনকাল:- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ।

⇔ ভৌগোলিক অবস্থান:-

উত্তর অক্ষাংশ ২২°৫৩’ এবং ২২°৫৬ -এর মধ্যে বিস্তৃত এবং দ্রাঘিমাংশ ৮৮°২৫′ পূর্ব থেকে ৮৬°৪৮´ পূর্বের মধ্যে অবস্থিত।

⇔ সীমানা:- উত্তরে বীরভূম, পূর্বে নদিয়া, পশ্চিমে বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান এবং হুগলি জেলা।

⇔ আয়তন:- ৫,৪৩২ বর্গকিমি।

⇔ জেলা সদর:- বর্ধমান।

 মহকুমার সংখ্যা

৪টি। বর্ধমান সদর উত্তর, বর্ধমান সদর দক্ষিণ, কালনা, কাটোয়া।  Purba Bardhaman District

 ভূ-প্রকৃতি ও মৃত্তিকা

  • রাঢ় অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত বর্ধমান জেলা।
  • রাঢ় অঞ্চল সাধারণত উঁচু নিচু তরঙ্গায়িত সমভূমি। ভাগীরথী, দামোদর ও অজয় নদীর পলি দ্বারা গঠিত বর্ধমানের বেশিরভাগ অঞ্চল।
  • সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা অনুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় জেলাটিকে।
  • ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় থেকে আউশগ্রাম থানার পূর্বসীমা পর্যন্ত ভূ-ভাগের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ মিটার, আউসগ্রাম থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত ভূ-ভাগ ৮০ মিটার এবং দুর্গাপুর থেকে বরাকর নদের সীমা পর্যন্ত ভূ-ভাগটির উচ্চতা ৬০-১১ মিটার।

⇔  জলবায়ু:- গরম ও আর্দ্র প্রকৃতির।

⇔ উদ্বৃতা :- সর্বোচ্চ ৪০° সেলসিয়াস সর্বনিম্ন ৮° সেলসিয়াস।

⇔ নদ-নদী:- অনেকগুলো নদীর সমাহার দেখা যায় এই জেলায়।

  • এই জেলার প্রধান নদী অজয় ও দামোদর। শীত-গ্রীষ্মে খরা হলেও বর্ষায় নদীগুলি ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
  • অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নদী বাঁকা, ব্রাহ্মণী, খড়ি, কুনুর, শিবাই, ময়ূরাক্ষীর পরিবর্তিত রূপ বাবলা ইত্যাদি। ভাগীরথী নদী জেলার পূর্ব বরাবর বয়ে গেছে।

⇔ অভয়ারণ্য:- ১টি। রমনাবাগান ডিয়ার পার্ক এখানে অবস্থিত।

⇔  কৃষিজ উৎপাদন :- পূর্ব বর্ধমান জেলাকে বলা হয় ‘পশ্চিমবঙ্গের শস্যাগার। জেলার ৫৪ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত।

  • ধান (আউস, আমন, বোরো) ও দুধ উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়, ডিম উৎপাদনে পঞ্চম ও আলু উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে এই জেলা।
  • এছাড়াও সরষে, আখ, পাট ও ডাল চাষ হয়।  Purba Bardhaman District

⇔  স্বাভাবিক উদ্ভিদ:- এখানে পর্ণমোচী অরণ্যে শাল, শিশু, নিম, সেগুন, অর্জুন, খয়ের প্রভৃতি অমূল্য গাছ দেখা যায়।

⇔ জনসংখ্যা:- ৪৮ লক্ষ ৪১ হাজার ৬৩২ জন (রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫.৩০ শতাংশ)।

⇔ পুরুষ:- ২৪,৬৯, ৩১০ জন।

⇔ মহিলা:- ২৩,৬৬, ২২২ জন।

⇔ জনঘনত্ব:- প্রতি বর্গ কিমিতে ৮৯০ জন।

⇔ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার:- ১২.০১ শতাংশ।

⇔  আদিবাসী জনসংখ্যা:- ২৭.৪৪ শতাংশ তফশিলি জাতিভুক্ত এবং ৬.২১ শতাংশ আধিবাসী।

⇔ লিঙ্গ অনুপাত:- ৯২২ জন (প্রতি ১০০০ জন পুরুষে)।

⇔ সাক্ষরতার হার:- মোট ৭৪.৭৩ শতাংশ। পুরুষ ৮০.৬০ শতাংশ এবং মহিলা ৬৮.৬৬ শতাংশ।

⇔ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:- বিশ্ববিদ্যালয় ১টি। রাজগঞ্জে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত-১৯৬০) এছাড়াও পলিটেকনিক কলেজ আছে ৫টি, আই. টি. আই. ১টি ও ৩টি জুনিয়ার টেকনিক্যাল স্কুল এখানে অবস্থিত।

 মোট কলেজের সংখ্যা:-

২৩টি। ডিগ্রি কলেজ ১৭টি, প্রযুক্তিবিদ্যা কলেজ ৬টি। এছাড়া ১টি মেডিকেল কলেজ, ১টি সাইবার রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সিটিটিউট, ১টি বর্ধমান ইন্সিটিটিউট অব মেডিকেল এন্ড লাইফ সায়েন্স রয়েছে।

⇔ পুরসভা:-

৯টি। কাটোয়া (১৮৬৯), দাঁইহাট (১৮৬৯), কালনা (১৮৬৯), রানিগঞ্জ (১৮৭৬), বর্ধমান (১৮৬৫), গুসকরা (১৯৮৮), মেমারি (১৯৯৫), কুলটি (১৯৯৩), ও জামুরিয়া (১৯৯৫)।

⇔  গ্রাম পঞ্চায়েত:- ২১৫টি।

⇔ পঞ্চায়েত সমিতি:- ২৩টি।

ব্লক:-

২৩টি। আউশগ্রাম-১, আউশগ্রাম ২, ভাতার, বর্ধমান-১, বর্ধমান-২, গলসি-১, গলসি-২, জামালপুর,

কালনা-১, কালনা-২, কাটোয়া ১, কাটোয়া-২, কেতুগ্রাম-১, কেতুগ্রাম-২, খণ্ডোঘোষ, মঙ্গলকোট মন্তেসর,

মেমারি-১, মেমারি -২, পূর্বস্থলী-১, পূর্বস্থলী-২, রাইনা-১, রাইনা-২।

⇔ থানা:- ১৯টি।

⇔  লোকসভা আসনঃ-

৩টি। বর্ধমান পূর্ব (তপশিলি জাতি), বর্ধমান-দুর্গাপুর, বোলপুর। • বিধানসভা আসন :

১৬টি। রায়না (তপশিলি জাতি), জামালপুর (তপশিলি জাতি), কালনা (তপশিলি জাতি), মেমারি, পূর্বস্থলী

উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, কাটোয়া, বর্ধমান উত্তর (তপশিলি জাতি), বর্ধমান দক্ষিণ, গলসি (তপশিলি জাতি),

ভাতার, খণ্ডঘোষ (তপশিলি জাতি), মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, আউসগ্রাম (তপশিলি জাতি), মন্তেশ্বর।

⇔ যোগাযোগ ও পরিবহণ:-

শেরশাহের আমলে ১৫৩৯ সালে নির্মিত জি. টি. রোড, এই জেলার মধ্যে দিয়ে ১৫৮ কিলোমিটার গেছে।

  • এছাড়া জেলার নিঙ্গা এবং পানাগড়ের কাছে বিরুতিহাতে মালবাহী এবং বিশেষ যাত্রীবাহী বিমান অবতরণ করে।
  • পূর্ব রেলপথের প্রধান শাখা ছাড়াও এই রেলপথ হাওড়া-বর্ধমান কর্ডলাইন, দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথে আসানসোল-আদ্রা, হাওড়া-কিউল এবং হাওড়া-বারহাররোয়া শাখা দিয়ে যুক্ত।
  • বর্ধমান-কাটোয়া ন্যারো গেজ লাইন ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি ব্রড গেজ লাইনে রূপান্তর হয়। জাতীয় সড়ক NH-60, NH 28, NH-2 (বর্তমানে NH-19) এই জেলার ওপর দিয়ে গেছে।

⇔ বাণিজ্য কেন্দ্র:-

বর্ধমান, কাটোয়া ।

⇔  শিল্প:-

কৃষিতে এই জেলার উন্নতি সর্বাধিক ঘটেছে। কৃষিতে নিযুক্ত জেলার ৫৪ শতাংশ মানুষ, মোট জমির প্রায় ৮৬ শতাংশ জমি ধান চাষে ব্যবহৃত হয়।

  • শালি (নিচু জমি, যার জল ধারণের ক্ষমতা বেশি এবং উর্বর) জমিতে আমন ধানের চাষ হয় এবং সুনা (অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি) আউশ ধানের উপযুক্ত।
  • ২,৪৮০ বর্গকিমি কৃষি জমির জন্য সেচের জল পাওয়া যায় দুর্গাপুরের ৬৭২ মিটার লম্বা ডিভিসি ব্যারেজ থেকে।  Purba Bardhaman District

⇔  অর্থনীতি:-

প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদন হওয়ার জন্য কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এই জেলার বৈশিষ্ট্য।

⇔  হাসপাতালের সংখ্যা:-

সরকারি হাসপাতাল ৩টি, গ্রামীণ হাসপাতাল ৫টি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৪টি।

⇔  গ্রন্থাগারের সংখ্যা:-

২০৮টি (দুটি জেলা মিলিয়ে)।

⇔ প্রধান উৎসব:-

দোলযাত্রা, ঈদ, মহরম, ছট পূজা, দুর্গাপূজা, বড়দিন, নবান্ন, দীপাবলী, কার্তিক লড়াই ইত্যাদি।

 প্রধান আঞ্চলিক মেলা 

♦ কার্তিক লড়াই

কার্তিক পুজো উপলক্ষ্যে প্রতি বছর বাঁশের কাঠামোয় নানা মূর্তি সাজিয়ে পৌরাণিক কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়। একে বলে ‘থাকা’। কার্তিক পূজা কাটোয়ায় ‘কার্তিক লড়াই’ নামে বিখ্যাত।

♦ দেবীপুর

কোজাগরী পূর্ণিমা ও দীপাবলী অমাবস্যার মাঝের চতুর্থীতে বোড়াগতি গ্রামে বাজি পোড়ানোর ধূম চলে। পঞ্চমীতে কালীপুজো এবং মেলা বসে। মেলা চলে পাঁচদিন।

  • স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে চতুর্থীতে ‘সয়লা’ শুরু এবং পঞ্চমীতে কালীপুজো শুরু অর্থাৎ ‘ঝাপান’। বিভিন্ন রঙয়ের বাজী পোড়ানো ও কালীপুজোয় আশেপাশের গ্রামের প্রচুর জনসমাগম হয়।

♦ মাধবডিহি

বর্ধমানের মাধবডিহি থানার দামুন্যা গ্রামে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম সাংস্কৃতিক মেলা।  Purba Bardhaman District

  • আয়োজক কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম স্মরণোৎসব কমিটি। মুকুন্দরাম সংগ্রহশালার পাশের মাঠে এই মেলার আয়োজন হয়। মেলার দিনগুলি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হয়।

♦ দধিয়ার মেলা (কেতুগ্রাম) 

কেতুগ্রামের দধিয়া বৈরাগ্যতলায় প্রতি বছর ২৭শে পৌষ এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে। জয়দেবেরে কেঁদুলির মতো এই মেলাতেও আখড়া বাঁধেন সাধক-বাউলেরা।

  • মেলার সূচনা কিভাবে হল তা নিয়ে এক জনশ্রুতি আছে। প্রায় তিন শতাব্দী আগে দধিয়া জঙ্গলে ভরা ছিল। সেখানে থাকতেন বৈষ্ণব সাধক গোপাল দাস।
  • মৃত্যুর কিছু দিন আগে তিনি ভিক্ষে করে ভক্তদের কাছে চাল-ডাল জোগাড় করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল ২৭শে পৌষ দধিয়ার জঙ্গলে বিরাট উৎসবের আয়োজন করবেন।
  • কিন্তু তাঁর ইচ্ছে পূরণ হবার আগেই তিনি মারা যান। তাঁর ওই অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতে এগিয়ে আসেন ভক্তরা। উৎসবের পরিচালনা করেন। গোপালদাসবাবাজী ট্রাস্টি।
  • উৎসবের তিনদিন ভক্তদের মধ্যে চিড়ে ও অন্ন বিতরণ করা হয়। আশেপাশের সমস্ত জেলা এমনকি রাজ্য থেকেও গোপালদাসবাবাজীর প্রচুর ভক্ত এই মেলায় আসেন।

♦ বুড়ো রাজের পুজো (পূর্বস্থলী) 

প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমায় পূর্বস্থলীর জামালপুরে বিখ্যাত বুড়ো রাজের পুজো হয়।

  • এই পুজো প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। শুধু বর্ধমান নয়, আশেপাশের বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকেও মানুষের ঢল নামে এই সময়।
  • ভাগীরথীর তীরে পূর্বস্থলির এই পুজোর রীতি হল ভক্তেরা প্রত্যেকে এক একটি অস্ত্র হাতে নাচতে নাচতে শোভাযাত্রা করেন গোটা এলাকা। এটাই রীতি। কথ্য ভাষায় এ পুজোকে ‘অস্ত্র মেলা’ও বলার চল আছে।

এছাড়া রথের মেলা, চড়কের মেলা, দাঁইহাটের রাসের শোভাযাত্রা ইত্যাদিও এই জেলায় মহাসমারোহে পালন করা হয়।

♦ লোকসংস্কৃতি ও লোক উৎসব

সত্যপীরের গান, বাউল গান, ফকিরি গান, ভাদু গান, টুসু গান, ময়ূরপঙ্খী গান, বাদাই গান, কবি গান (তরজা

গান), লেটো (নাচের দল), ঝুমুর গান, কৃষ্ণযাত্রা, পাঁচালি গান, জারি গান, পটের গান, ঝাঁপান, গাজন, ঘেঁটু

পুজো, হাপু গান, বোলান গান, টহল গান, রণপা ও কাঠিনাচ এই জেলার বিখ্যাত লোকগান ও লোকসংস্কৃতি।

 দর্শনীয় স্থান

এই জেলায় মনসা পুজোর আয়োজন খুব বেশি হয়। কারণ মনসামঙ্গলের চম্পক নগরী’ ছিল এই জেলার বুদবুদ থানায়।

শ্রীনিবাস আচার্য (জন্ম ১৫১৭ খ্রি.) 

পিতার নাম চৈতন্য দাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি চৈতন্য নির্দেশিত বৃন্দাবনী ধারায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার মূল হোতা।

  • ভক্তি রত্নাকর, প্রেম বিলাস, অনুরাগবল্লী ইত্যাদি ঐতিহাসিক গ্রন্থে তাঁর বর্ণময় জীবনকথা লিপিবদ্ধ আছে। কাশীরাম দাসের (বাংলায় মহাভারত লেখেন।
  • ১৬০২-১৬০৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি এই মহাভারত রচনা করেন) জন্মভূমি কাটোয়া সংলগ্ন সিঙ্গিগ্রাম। তাঁর লেখা বই ‘কাশিদাসী মহাভারত’ নামে খ্যাত।
  • কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর জন্মস্থান (১৫৬০ খ্রি.) রায়না ব্লকের দামুন্যা গ্রাম। তিনি ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা।  Purba Bardhaman District

কৃষ্ণদাস কবিরাজের (শ্রীচৈতন্যদেবের চরিতকার) জন্মভিটা কাটোয়ার ঝামাটপুর গ্রামে (১৪৯৬ খ্রি.)। ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

  • ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর জন্মস্থান (১৫-শ শতকে) কুলীন গ্রাম।

গৌড়ের রাজা রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাঁকে ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

  • পল্লীকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের জন্মস্থান অজয় নদের তীরে মঙ্গলকোটের কোগ্রাম। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা—শতদল, বনতুলসী, উজানী, একতারা, বীথি, মুখোশের দোকান ইত্যাদি।

মঙ্গলকোটের (জাতকে বর্ণিত জেতুত্তর নগরী) প্রত্নবিস্ময়। শাঁখাইগ্রাম (পুরাণ বর্ণি শঙ্কেশ্বরীর বা দেবী দুর্গার মন্দির) এই জেলায় অবস্থিত।

  • লোককথা, দেবী দুর্গা এখানে পড়েছিলেন। বাংলার নবাবরা এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন যা শাখাই দুর্গ নামে খ্যাত। এখানে ভাগীরথী ও অজয় নদ এসে মিশেছে।

কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮২৭-১৮৮৭) জন্মস্থান কালনা বাকুলিয়া গ্রামে। তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি—পদ্মিনীর উপাখ্যান, কর্মদেবী, সুরসুন্দরী ইত্যাদি।

  • ছান্দসিক কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছুপি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রস-সাহিত্যিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান গঙ্গাটিকুরি গ্রাম।
  • কালীসাধক কমলাকান্তের জন্মভূমি কালনা। তিনি বিশালাক্ষী মন্দিরে সিন্ধিলাভ করেন। তাঁর বিখ্যাত গান—‘আদর করে হৃদে রাখ আদরিণী শ্যামা মাকে’ উল্লেখযোগ্য।

 

ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মভূমি জামালপুর। ঝামটপুরের কাছাকাছি ঊনবিংশ শতাব্দীর রঙ্গব্যাঙ্গের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক গ্রাম গঙ্গাটিকুরি গ্রাম।

রাসবিহারী বসু (বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী)

তিনি সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী

পূর্বস্থলীর সারডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কালা জ্বরের ওষুধের আবিষ্কর্তা। ইউরিয়া স্টিবামাইন ওষুধ আবিষ্কার করেন।

  • তাঁকে ইংরেজ সরকার ‘স্যার’ ও ‘রায়বাহদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ভারতের প্রথম ব্লাড ব্যাংক তিনি নির্মাণ করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিখ্যাত উকিল রাসবিহারী ঘোষের বাড়ি জেলার খন্ডকোষ থানার তোড়কোণা গ্রামে।

  • তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এম. এ. (মাস্টার অব আর্টস, ইংরেজি)। সুরাট কংগ্রেসে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯০৭ সালে।
  • বিখ্যাত পাঁচালিকার দাসরথী রায় জন্মেছিলেন কাটোয়ার বাঁধমুড়া গ্রামে।

কেতুগ্রাম একটি শাক্তপীঠ

রাজা চন্দ্রকেতুর নামানুসারে এই নাম হয়। কেতুগ্রামের এক কিলোমিটার পশ্চিমে বিখ্যাত ওষ্ঠহাস বা অট্টহাস তলা।

  • দেবীর (সতী) ওষ্ঠ পরেছিল। এখানে। ঈশানী নদীর তীরে এটি অবস্থিত।
  • ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় গ্রন্থের রচয়িতা প্রাবন্ধিক অক্ষয়কুমার দত্ত ও তাঁর পৌত্র সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মস্থান পূর্বস্থলীর চুপীগ্রাম।

অজয়-ভাগীরথী-শিবাই নদীর সঙ্গমস্থল ‘তেমুনি’। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ। কালনার নব-কৈলাশ ১০৮ শিবমন্দির বিখ্যাত।  Purba Bardhaman District

  • ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ তেজর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কালনায় নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর বিবাহস্থল। শাসপুর অঞ্চলের দাঁতনকোঠিতলায় ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদ।
  • হিজরি ৯৩৩ অব্দে (১৫৩০ খ্রি.) বাংলার সুলতান নসরৎ শাহের পুত্র আলাউদ্দিন মুজফ্ফর ফিরোজ শাহের সেনধ্যক্ষ ও উজির উলুখ মসনদ খান মালিক এই দশগম্বুজ জামি মসজিদটি নির্মাণ করেন।
  • ক্ষীরগ্রামে সাত যোগাদ্যা দেবীর মন্দির।

বর্ধমান রাজবাড়ী

১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে মহারাজ মহতাব চাঁদ কর্তৃক নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া সর্বমঙ্গলা মন্দির (বাঁকা নদীর উত্তরে এই মন্দির অবস্থিত) ও কার্জন গেট দ্রষ্টব্য স্থান।

  • বর্ধমান জেলার আউশগ্রামে পাওয়া গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক (পান্ডুরাজার ঢিবি) নিদর্শন। জৌগ্রাম—শস্যশ্যামলা গ্রামটির শোভা অতীব সুন্দর।
  • এখানকার অতীত দিনের মন্দির এবং মাজারগুলি আজও ইতিহাসের নিরিখে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষর বহন করে চলেছে।
  • এটি একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র। জৌগ্রামের সবথেকে প্রাচীন ও উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো জলেশ্বর শিব মন্দির।

মেঘনাদ সাহা তারামণ্ডল

  • ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি এই তারামন্ডলের উদ্বোধন হয়।
  • জেলার মানুষের বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি করবার জন্য এক বিশেষ উদ্যোগ।
  • কৃষ্ণসায়র—কৃষ্ণসায়র পরিবেশ কানন। এখানকার জলাশয়ে শুশুক, রাজহংস আছে। এছাড়া জলাশয়ে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা আছে।

আসানসোল থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়া গ্রাম। আসানসোলের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত কল্যাণেশ্বরী মন্দির।

  • রমনাবাগান অভয়ারণ্য এই জেলার আরও একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীর স্থান।
  • লোককথা শহরের উত্তরদিকের জঙ্গলে রমনা নামক বিখ্যাত ঠ্যাঙ্গারের আস্তানা ছিল। এই জঙ্গল তাই রমানাবাগান নামে পরিচিত।

জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

 মুকুন্দরাম, চক্রবর্তী, কবিকঙ্কণ (আনুঃ ১৫৪৭-?):-

দামুন্যা। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থ লিখে কবিকঙ্কণ উপাধি পান। এছাড়া অনেক পাঁচালিও লিখেছেন।

দাশরথি বা দাশু রায় (১৮০৬-১৮৫৭):-

প্রতিভাশালী পদ রচনাকার। প্রথমে কবির দলে যোগ দিলেও পরে পাঁচালীর আখড়া গড়েন।

  • পাঁচালীর মাধ্যমে সমাজে লোকশিক্ষা, ধর্মবোধ, সমাজ সচেতনতা তৈরি করতে সমর্থ হন। ৬৮টি পালাও রচনা করেছিলেন।

 কালিদাস রায়, কবিশেখর (১৮৮৯-১৯৭৫):-

করুই গ্রাম। কবি, প্রাবন্ধিক, রস রচনাকার। কবিশেখর কালীদাস রায়ের জন্মভিটা করুই গ্রাম। বৈষ্ণব ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন।

  • রবীন্দ্র পুরস্কার (‘পূর্ণাহুতি’ কাব্যগ্রন্থ, ১৯৬৮) ও দেশিকোত্তম সম্মানে ভূষিত। ‘বুঁদকুড়ো, ‘রসকদম্ব’, ‘বল্লরী’ তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ।  Purba Bardhaman District

 সৈয়দ আবদুল সামাদ (১৮৯৫-১৯৬৫):-

‘ফুটবলের যাদুকর’ বলা হত। ১৯২৬ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেন।

   কাজি নজরুল ইসলাম, বিদ্রোহী কবি (১৮৯৮-১৯৭৬)

  • চুরুলিয়া। বিদ্রোহী কবি। যে কবি তেজে অগ্নি, ক্রোধে দুর্বাশা, প্রতিজ্ঞায় পরশুরাম, যুদ্ধে সৈনিক—সেই নজরুল ইসলাম ওরফে দুখু মিঞা বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তার পিতার নাম ফকির আহমদ ও মাতা জ্যাহেদা খাতুন। ছোটো থেকেই তাকে চরম দারিদ্রের সঙ্গে গড়াই করতে হয়েছে।
  • চাকরের কাজ থেকে শুরু করে ৪৯ নম্বর বাঙালী পল্টনে যোগদান পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার মধ্য দিয়ে কবি জীবনের অভিজ্ঞতার ডালি সাজিয়েছেন।
  • তারপর পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসন ও শোষণ, সামন্ততন্ত্র ও জমিদারদের অত্যাচারে দীন দরিদ্রের দুর্দশা, ধর্মীয় বিদ্বেষ-জাতিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা -রাজনৈতিক উৎপীড়ন দেখে কবি অগ্নিক্ষরা প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।
  • গান ও কবিতায় ইংরেজদের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণার পাশাপাশি সাম্যের গান গেয়েছেন, নারীমুক্তির কথা বলেছেন, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।
  • মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে ‘নবযুগ’ ও পরবর্তীতে দৈনিক সেবক’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’ ইত্যাদি পত্রিকা কবি সম্পাদনা করেছেন।
  • ১৯২১ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কাব্যরচনা করেছেন। ১৯২২ সালে ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে কবি রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং একবছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন।
  • তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল—অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, সর্বহারা, দোলনচাঁপা ইত্যাদি। কবির শেষজীবন বড় করুণ।
  • দুঃখে-দারিদ্রে-শোকে- অসুখে-অশান্তিতে বিহ্বল কবি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছর সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে বাকশক্তিহীন হয়ে জীবস্মৃত অবস্থায় ছিলেন।
  • বাংলাদেশের ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  Purba Bardhaman District

আঙুরবালা (১৮৯৯-১৯৮৪):-

প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। আসল নাম ছিল প্রভাবতী। ছায়াছবি ও মঞ্চে তাঁর অভিনয় বিখ্যাত হয়ে আছে। তাঁকে ১৯৮৩ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (১৯০১-১৯৭৬):-

অন্ডাল। খ্যাতনামা নির্দেশক, সাহিত্যিক, পরিচালক। কালি-কলম যুগের অন্যতম স্রষ্টা। গ্রন্থ ‘কয়লাকুঠির দেশে’, ‘ডাক্তার’, ‘বন্দী’, ‘এক মন দুই দেহ’ ইত্যাদি। তাঁর আত্মজীবনীর নাম ‘যে কথা বলা হয় নি (১৯৬৮)।

বটুকেশ্বর দত্ত (১৯০৮-১৯৬৫):-

বটুকেশ্বর দত্তর বাড়ি বর্ধমানের ওয়ারি গ্রামে। ভগৎ সিং ও চন্দ্রশেখর আজাদের সঙ্গে বিপ্লবী ‘হিন্দুস্থান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি’ দলে যোগ দিয়ে আগ্রা ও পরে পাঞ্জাবে যান।

  • ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং ইংরেজদের পাবলিক সেফটি বিলের প্রতিবাদে দিল্লির সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলি ভবনের গ্যালারি থেকে বোমা ছোঁড়েন। বিচারে বটুকেশ্বরের দ্বীপান্তর হয়।

হরেকৃষ্ণ কোঙার (১৯১৫-১৯৭৪):-

মেমারি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সচিব।

  • বর্ধমানে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৩-১৯৮৩):-

আসানসোল। নাট্য জগতে খ্যাতনামা অভিনেতা ও পরিচালক। ১৯৭৭-এ ‘নান্দীমুখ’ নাট্যদল গঠন করেন। প্রথম যে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন—’ছুটি’।  Purba Bardhaman District

এছাড়াও জেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা হলেন—

দেবকী কুমার বসু (বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার), বংশগোপাল চৌধুরী (রাজনীতিবিদ), বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী

(রাজনীতিবিদ), নিরুপম সেন (পূর্বতন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী), অক্ষয় কুমার দত্ত (প্রথম ভারতীয় ভাষাবিজ্ঞানী),

ইন্দুমাধব মল্লিক (ইকমিক কুকার আবিষ্কার করেন), গুণরাজ খাঁ বা মালাধর বসু (হুসেন শাহ-র মন্ত্রী, শ্রীকৃষ্ণ

বিজয় কাব্য রচয়িতা), নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী (ফুটবলের জনক), কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

  • বর্তমান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী (সর্বশিক্ষা, গ্রন্থাগার, সংসদ বিষয়ক স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী, পূর্ব

বর্ধমান), মলয় ঘটক (শ্রম দপ্তর, আইন ও বিচার মন্ত্রী, পশ্চিম বর্ধমান) এই জেলার বাসিন্দা।

এক নজরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী 

  •  অজয় ও দামোদর নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলই বর্ধমান।
  •  ১৬১০ খ্রি. এই শহরে শের আফগান ও বাংলার তৎকালীন শাসক কুতবউদ্দিন কোকা পরস্পর যুদ্ধ করে নিহত হন। তাঁদের উভয়ের সমাধিও এখানে আছে।

 

 মুঘল আমলে  প্রধান জমিদার ছিলেন—কৃষ্ণরাম রায়চৌধুরী

১৯৫৩-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমিদারী অধিগ্রহণ করে। তার সিংহভাগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করা হয়। মহতাব মঞ্জিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ খ্রি.।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলকে ‘কালো হীরের ভূমি’ বলা হয়।

এই জেলার নিঙ্গা ও পানাগড়ের কাছে বিরতিহাতে যথাক্রমে মালবাহী ও বিশেষ যাত্রীবাহী বিমান অবতরণ ক্ষেত্র আছে।।

নগর সভ্যতার বিকাশের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় শান্তিনিকেতনের কাছে পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে।

  • অজয় ও কুন্নুর নদীর সঙ্গমস্থলে মঙ্গলকোটে তাম্র-প্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
  • মনসামঙ্গলের চম্পকনগরীর অবস্থান এই জেলার বুদবুদ থানায়। মনসা ও শিব এই জেলার লোকের প্রধান আরাধ্য দেব-দেবী।

মিষ্টান্ন যেমন—মানকরের খাজা ও কদমা, বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, সাতগাছিয়ার মাখা সন্দেশ, মেমারির রসগোল্লা ও দই বিখ্যাত।

সীতাভোগ ও মিহিদানা জি আই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) ট্যাগ পেয়েছে।

মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহতার ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জনকে বর্ধমানে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন।

তাঁকে অভ্যর্থনা করার জন্য একটি অপূর্ব প্রবেশদ্বার নির্মাণ করেন। তারই নাম ‘কার্জন গেট। যদিও এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্টার অফ ইণ্ডিয়া’। বর্তমানে এর নাম ‘বিজয়তোরণ’।

দারিয়াপুর ইউনেস্কোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।

২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২৫ একর জমির ওপর রাজ্যের প্রথম জুট পার্ক-এর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Read More:- The Rivers Of West Bengal | For Upcoming WBCS Exam | Important Study Notes On Indian Geography

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles