Energy Flow In Ecosystem | Environmental Science question answer for WB Primary Tet, CTET

Energy Flow In Ecosystem

Energy Flow In Ecosystem | Environmental Science question answer for WB Primary Tet, CTET: In Ecosystem, there is a chapter named “Energy Flow”. There are three types of Pyramids in the Ecosystem and “The Pyramid Of Energy” is one of them. In this chapter, we are presenting some important Questions- Answers related to the topic you should learn carefully. So, let’s start discussing the topic.

Energy Flow In Ecosystem:বাস্তুতন্ত্রের শক্তিপ্রবাহ

Hello Aspirants, welcome back to our Channel “Smart Knowledge”. Today in this topic We are providing questions related to “Energy Flow”. Which are very important for WB Primary tet and Ctet Exams.


1. শক্তিপ্রবাহ কাকে বলে?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে সৌরশক্তি রূপান্তরিত হয়ে এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে শক্তিপ্রব বা এনার্জি ফ্লো (Energy Flow) বলে। সৌরশক্তি উদ্ভিদের দেহে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত পর উদ্ভিদ যখন তৃণভোজী প্রাণীর খাদ্যে পরিণত হয়, তখন খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির স্তর অনুসারে শক্তি ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়ে।

2. বাস্তুতন্ত্রে শক্তি কীভাবে প্রবাহিত হয়?

উত্তর:- সমস্ত শক্তিপ্রবাহের মূল উৎস হল সৌরশক্তি। সৌরশক্তির জোগান ছাড়া বাস্তুতন্ত্রের কোনো নেই। বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহিত হওয়ার কয়েকটি বিশেষ ধরন আছে। যেমন

(1) উৎপাদক স্তরে সবুজ উদ্ভিদ সর্বপ্রথম সৌরশক্তিকে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে নিজেদের দেহে সঞ্চয় করে এবং তারপরে ওই সঞ্চিত শক্তি অন্যান্য খাদক স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

(2) বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ সর্বদা একমুখী। যেমন— সূর্য থেকে আগত শক্তি প্রথমে উৎপাদক স্ত সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে আবদ্ধ হয় এবং খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন খাদক স্তরে শক্তি পৌঁছোয় অর্থাৎ শক্তিপ্রবাহ বাস্তুরীতিতে সর্বদা উৎপাদক স্তর থেকে প্রগৌণ খাদক স্তরে পৌঁছোবে। এটাই নিয়ম। প্রগৌণ খাদক স্তর থেকে ক্রমশ নীচের দিকে উৎপাদক স্তরে শক্তিপ্রবাহের কোনে সুযোগ নেই।

(3) যেভাবে পরিবেশের মধ্যে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসের আবর্তন হয়, সেভাবে বাস্তুতন্ত্রে শক্তির কোনো আবর্তন হয় না।

(4) প্রাথমিক স্তর থেকে গৌণ খাদক এবং প্রগৌণ খাদক স্তরে যতই শক্তি স্থানান্তরিত হয়, ততই শক্তির জোগান কমতে থাকে।

(5) বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ তাপগতি বিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র মেনে চলে।

3.  লিন্ডেম্যান-এর দশ শতাংশের নিয়মটি কী?

উত্তর:- বিজ্ঞানী লিন্ডেম্যান (Raymond Lindeman) 1942 সালে তাঁর বিখ্যাত ‘দশ শতাংশের নিয়ম বা নীতি’ অনুসারে (10 per cent Law) বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে শক্তিপ্রবাহের ক্রমহ্রাসমান বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে দেখা যায় যে, খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিটি স্তরে দশ শতাংশ শক্তি দেহ গঠনের কাজে ব্যবহৃত হয় ।

4. শক্তির স্থানান্তর বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- শক্তির স্থানাস্তর হল বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক স্তর থেকে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাণীস্তরে প্রবাহিত শক্তি। এই প্রবাহ একমুখী এবং শক্তির স্থানাস্তর তাপগতি বিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রকে অনুসরণ করে।

5. বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ তাপগতি বিদ্যার সূত্র কীভাবে মেনে চলে?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ তাপগতি বিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র অনুসরণ করে। তাপগতি বিদ্যা বা থার্মোডায়নামিক্স (Thermodynamics) এর প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে যে, শক্তিকে রূপান্তরিত করা যায়, কিন্তু সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না’। আবার দ্বিতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে, শক্তি রূপান্তরিত হওয়ার সময়ে হ্রাস পায়। বাস্তুতন্ত্রে সৌরশক্তি থেকে উদ্ভিদের দেহে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়া তাপগতি বিদ্যার প্রথম সূত্রকে অনুসরণ করে। আবার বিভিন্ন খাদক স্তরে রূপান্তরিত হওয়ার সময়ে যে শক্তি হ্রাস পায়, তা তাপগতি বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়।

6. খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিটি পর্যায়ে শক্তি ও জীবভর কমে যায় কেন?

উত্তর:- লিন্ডেম্যান-এর নীতি অনুসারে খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিটি ওপরের স্তর তার নীচের স্তর থেকে মাত্র 10 শতাংশ শক্তির জোগান পায় কারণ উচ্চ পর্যায়ের খাদকেরা (যেমন সিংহ, বাঘ) তাদের নীচের স্তরে থাকা প্রাণীদের বা জীবদের (যেমন জেব্রা, হরিণদের) খাদ্য হিসেবে পেলে, ওই নীচের স্তরে থাকা জীবদেহের তত্ত্বর (tissue) মধ্যে আবদ্ধ শক্তিটুকুই ওপরের স্তরের খাদকদের মধ্যে পৌঁছোয়। কেননা নীচের স্তরের জীবেরা শ্বসন (respiration), রেচন (excretion)-এর কাজে যে শক্তি ব্যয় করেছে, তা কোনোভাবেই খাদ্যশৃঙ্খলের ওপরের স্তরে থাকা জীবেদের মধ্যে পৌঁছোতে পারে না। এই কারণে খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতি পর্যায়ে শক্তি ও জীবভরের পরিমাণ হ্রাস পায়।

7. বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের পর্যায়গুলি কী কী?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে তিনটি পর্যায়ে শক্তি প্রবাহিত হয়, যেমন- (1) শক্তি অর্জন, (2) শক্তির ব্যবহার, এবং (3) শক্তির স্থানান্তর।

8. সৌরশক্তির কতটা উদ্ভিদের দেহে আবদ্ধ হয়?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে শক্তির মূল উৎস হল সূর্যের আলো। তবে পৃথিবীতে সূর্য থেকে যত আলোকশক্তি পৌঁছোয় তার মাত্র 0.1% সবুজ উদ্ভিদের দেহে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে আবদ্ধ হয়। এই কাজটি বাস্তুতন্ত্রে সৌরশক্তির অর্জন হিসেবে পরিচিত। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত মোট আলোকশক্তির পরিমাণ 12-3 × 1022 কিলো ক্যালোরি।

9. সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে?

উত্তর:- আলোর উপস্থিতিতে সবুজ উদ্ভিদ ক্লোরোফিলের সাহায্যে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের সম-অণু আক্সজেন ত্যাগ করে। এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ বলে। ইংরেজিতে সালোকসংশ্লেষকে ফটোসিন্থেসিস (Photosynthesis) বলে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, Photo শব্দটির অর্থ আলো এক Synthesis শব্দটির অর্থ সংশ্লেষ।

যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ আলোর ফোটন কণা গ্রহণ করে আলোকশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকেও সালোকসংশ্লেষ বলা হয়। 1898 সালে বিজ্ঞানী বার্নেস (Barnes) ফটোসিন্থেসিস শব্দ প্রথম ব্যবহার করেন।

10. সালোকসংশ্লেষ কীভাবে ঘটে?

উত্তর:- সবুজ উদ্ভিদ মাটি থেকে শিকড়ের সাহায্যে জল শোষণ করে পাতার মেসোফিল কলায় পাঠায়। প্রসঙ্গত সবুজ পাতার ওপরের ত্বক ও নীচের ত্বকের মধ্যে অবস্থিত ক্লোরোফিলযুক্ত কলাকে মেসোফিল কলা বলে। অন্যদিকে, গাছ পাতার সাহায্যে বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস শোষণ করে মেসোফিল বলার পাঠিয়ে দেয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে মেসোফিল কলার কোশগুলিতে এই জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ক্লোরোফিলের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। ফলে পাতার কোশে শর্করা জাতীয় খাদ্য, গ্লুকোজ তৈরি হয়। এইভাবে সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ করে এবং নিজের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করতে সমর্থ হয়। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার রাসায়নিক সমীকরণ হল

6CO₂ + 12H₂O সূর্যালোক/ ক্লোরোফিল = C6H12O6 + 6H₂O+ 6O₂

11. সালোকসংশ্লেষের পরিবেশগত গুরুত্ব কী?

উত্তর:- (1) সালোকসংশ্লেষের সাহায্যে সবুজ উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে সম-অণু অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে পরিত্যাগ করে। ফলে পরিবেশের মধ্যে অক্সিজেনের নিয়মিত জোগান পাওয়া যায়। সেই কারণে সবুজ উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে গেলে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

(2) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং রাসায়নিক শক্তি খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয়। এর পরে খাদ্যের মাধ্যমে ওই স্থৈতিক শক্তি প্রাণী ও মানুষের দেহে তাপশক্তি বা গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। ফলে সালোকসংশ্লেষ শক্তিচক্রকে অক্ষুণ্ণ রাখে।

(3) সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তি ও স্থৈতিক শক্তিরূপে কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের মধ্যে সঞ্চিত রয়েছে বলেই মানুষ এই জ্বালানি উপাদানগুলি থেকে শক্তি আহরণ করতে পারে।

(4) সালোকসংশ্লেষের সাহায্যে গ্লুকোজ উৎপাদিত হয়ে শ্বেতসার রূপে উদ্ভিদের মধ্যে সঞ্চিত হয়। সমস্ত প্রাণীজগৎ খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে এই খাদ্য গ্রহণ করে জীবনধারণ করে।

12. বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদনশীলতা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদনশীলতা বলতে সবুজ উদ্ভিদ বা উৎপাদক স্তরে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরের পরিমাণকে বোঝায়। শক্তির জোগান অনুসারে উৎপাদনশীলতা দুধরনের, যথা— (1) মোট প্রাথমিক উৎপাদন (Gross Primary Production- GPP) ও (2) নিট প্রাথমিক উৎপাদন (Net Primary Production– NPP)

13. মোট প্রাথমিক উৎপাদন কী?

উত্তর:- সালোকসংশ্লেষের সময়ে সবুজ উদ্ভিদ আলোকশক্তিকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করে যে পরিমাণ শক্তি তার নিজের দেহে আবদ্ধ করে তাকে মোট প্রাথমিক উৎপাদন বা ‘গ্রস প্রাইমারি প্রোডাকসন’ (Gross Primary Production-GPP) বলে।

14. নিট প্রাথমিক উৎপাদন কী?

উত্তর:- মোট প্রাথমিক উৎপাদন বা সালোকসংশ্লেষের সময়ে উদ্ভিদের দেহে যে পরিমাণ শক্তি আবদ্ধ হয়, তা থেকে উদ্ভিদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু শক্তি ব্যয় হবার পরও যে অবশিষ্ট শক্তি সবুজ উদ্ভিদের দেহে সঞ্চিত থাকে তাকে নিট প্রাথমিক উৎপাদন বা ‘নেট প্রাইমারি প্রোডাকসন’ (Net Primary Production NPP) বলে। মোট প্রাথমিক উৎপাদনের 50-58% হল নিট প্রাথমিক উৎপাদন।

15. নিট প্রাথমিক উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর:- নিট প্রাথমিক উৎপাদন সবসময়ে মোট প্রাথমিক উৎপাদনের চেয়ে কম হয়। খাদ্যশৃঙ্খলে উৎপাদক স্তর থেকে খাদক স্তরে নিট প্রাথমিক উৎপাদনের জন্য উদ্বৃত্ত শক্তি স্থানান্তরিত হয়।

Read More:- Five Changes From Today | There are Some Changes in Rules that may affect the Middle- Class Family

16. বাস্তুতন্ত্রে শক্তি কীভাবে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর:- উৎপাদক স্তরে সবুজ উদ্ভিদরা নিট প্রাথমিক উৎপাদনের সাহায্যে যে উদ্বৃত্ত শক্তিকে নিজেদের মধ্যে ধরে রাখে তাই হল আসল শক্তি। এই শক্তি প্রাথমিক খাদকেরা খাদ্যের মাধ্যমে উৎপাদকদের কাছ থেকে পায়। প্রাথমিক খাদকেরা, যেমন— কীটপতঙ্গ, নিজেদের শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে অর্জিত শক্তি খরচ করার পর যে উদ্বৃত্ত শক্তি তাদের দেহে আবদ্ধ করে রাখে তাই হল গৌণ খাদকের আসল শক্তি। এইভাবে খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে আসল শক্তির পরিমাণ কমে এবং পরবর্তী স্তরে অর্জিত শক্তির পরিমাণও কমে যায়। খাদকদের মধ্যে এই অর্জিত শক্তিকে আসল অর্জিত শক্তি বলে।

17. বাস্তুতন্ত্রে এস এনার্জি বা ইনটেক (Gross Energy বা Intake) কী?

উত্তর:- “এস এনার্জি” (GE) বা “ইনটেক” বলতে প্রাণীরা যে খাদ্য গ্রহণ করে, সেই খাবারের মধ্যে উপস্থিত মোট রাসায়নিক শক্তিকে (Chemical energy) বোঝায়। GE-র একক হল Mcal/kg (অর্থাৎ মেগাক্যালোরি) প্রতি কেজি-তে।

18. শ্বসন শক্তি বা রেসপিরেটরি এনার্জি বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- আসল অর্জিত শক্তি (Gross Energy / Intake) থেকে যে পরিমাণ শক্তি প্রাণীদেহে তাপ উৎপাদন এবং অন্যান্য শারীরিক প্রয়োজনে খরচ হয়ে যায়, তাকে শ্বসন শক্তি বা ‘রেসপিরেটারি এনার্জি’ (Respiratory Energy) বলে।

19. বাস্তুতন্ত্রে সূর্যকে শক্তির উৎস বলে কেন?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে সূর্যই হল শক্তির সবচেয়ে বড়ো উৎস। সূর্য থেকে পাওয়া সৌরশক্তির যতটুকু বাস্তুতন্ত্রের কাজে লাগে না, তা তাপ শক্তি হিসেবে বেরিয়ে যায়। খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তি ও পুষ্টি এক জীব থেকে অন্য জীবের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

সূর্য পৃথিবীকে যে আলোকশক্তি পাঠায় তাকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে প্রথমে সবুজ উদ্ভিদ তার নিজের দৈহিক প্রয়োজন মেটায় এবং অবশিষ্ট শক্তি পুষ্টি বা পরিপোষক হিসেবে খাদ্য অণুর মধ্যে স্থিতিশক্তি বা রাসায়নিক শক্তি রূপে সঞ্চিত করে রাখে। এই রাসায়নিক শক্তি আসল অর্জিত শক্তি হয়ে (Gross Energy Intake) প্রাথমিক খাদকের দেহ সঞ্চারিত হয়। দেহের মধ্যে তাপশক্তি ও গতিশক্তি তৈরি করার জন্য খাদ্য হিসেবে তৃণভোজীদের থেকে মাংসাশীরা শক্তির জোগান পায়। এইভাবে শক্তি ধাপে ধাপে প্রথমে উদ্ভিদ বা উৎপাদকদের মধ্যে, তারপরে তৃণভোজীদের মধ্যে, তারও পরে মাংসাশীদের মধ্যে এবং সবশেষে সর্বভুক প্রাণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রতিটি জীবের মধ্যে সে রাসায়নিক শক্তি পাওয়া যায় তা হল আসলে রূপান্তরিত সৌরশক্তি।

20. পুষ্টিস্তর বা ট্রফিক লেভেল কাকে বলে?

উত্তর:- গ্রিক শব্দ ‘ট্রফ’ (Troph) কথাটির অর্থ হল খাদ্যের জোগান। সুতরাং ট্রফিক লেভেল বলতে খাদ্যের জোগান সংক্রান্ত স্তর বা বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টির ক্রমপর্যায় অনুসারে পুষ্টির স্তরকে বোঝায়। যথা—(1) উৎপাদক স্তর (উদ্ভিদ), (2) প্রাথমিক খাদক স্তর (যেমন— কীটপতঙ্গ), (3) গৌণ খাদক স্তর (যেমন—মাছ), (4) প্রগৌণ খাদক স্তর (যেমন— মানুষ)। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, উৎপাদক স্তর থেকে যত ওপরে ট্রফিক লেভেল বা পুষ্টিস্তর স্তরে যাওয়া যায়, পুষ্টির পরিমাণ তত কমে।

21. খাদ্য পিরামিড কাকে বলে?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে পুষ্টির গঠন বা খাদ্যের জোগান ব্যবস্থাকে পর পর ক্রম অনুসারে সাজালে যে পিরামিড তৈরি হয়, তাকে খাদ্য পিরামিড বা ফুড পিরামিড (Food Pyramid) বলে। “বাস্তুসংস্থানের পিরামিড” বা “ইকোলজিক্যাল পিরামিড” নামেও একে অভিহিত করা হয়। খাদ্য পিরামিডের সবচেয়ে নীচের স্তরে রয়েছে উৎপাদক (যেমন— সবুজ উদ্ভিদ)। এরা সংখ্যায় ও পরিমাণে সবচেয়ে বেশি। খাদ্য পিরামিডের মধ্যে ক্রমশ ওপরের স্তরে খাদ্যের জোগান যেমন কমতে থাকে, খাদকের সংখ্যাও হ্রাস পায়। এইভাবে বাস্তুরীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।

22. খাদ্য পিরামিডের সাপেক্ষে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব কী?

উত্তর:- মানুষ হল সর্বভুক স্তরের জীব। সুতরাং মানুষের সংখ্যা বা জনসংখ্যা যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে চলে তা হলে উৎপাদক স্তরে শস্য চাষের ওপর কী বিপুল চাপ পড়ে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে লিন্ডেম্যান-এর “দশ শতাংশ নীতি” (Lindeman’s Ten Percent Law, 1942) অনুসারে প্রতিটি পুষ্টি স্তরে শক্তির জোগান 10% হারে কমে যায়।

23. বাস্তুসংস্থানের পিরামিড কয় ধরনের ও কী কী?

উত্তর:- বাস্তুসংস্থানের পিরামিড তিন ধরনের, যেমন (1) সংখ্যার পিরামিড (Pyramid of numbers); (2) জীবভর বা বায়োমাসের পিরামিড (Pyramid of biomass); (3) শক্তির পিরামিড (Pyramid of energy)

24. সংখ্যার পিরামিড বা পিরামিড অব নাম্বারস বলতে কী বোঝায়?

উত্তর:- কোনো বাঞ্ছনীতি বা বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যস্তর অনুসারে বিভিন্ন জীবের সংখ্যাকে ক্রমপর্যায়ে সাজালে যে পিরামিড বা শিগর গঠিত হয়, তাকে সংখ্যার পিরামিড বলে। এলটন (Elton) 1927 সালে পিরামিড অব নাম্বারস কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। ইংরেজি ভাষান্তরে সংখ্যার পিরামিডকে ‘পিরামিড অব নাম্বারস’ ( Pyramid of numbers) বলা হয়।

সংখ্যার পিরামিডের সাহায্যে উৎপাদকের সংখ্যার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে অবস্থিত খাদকের সংখ্যার সম্পর্ক বোঝানো হয়। আলোচ্য পিরামিড অনুসারে খাদ্যস্তরে জীবের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয় এবং পরবর্তী উচ্চতর স্তরগুলিতে জীবের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। যেমন– গাছপালার সংখ্যার তুলনায় পোকামাকড়ের সংখ্যা কম। আবার পোকামাকড়ের তুলনায় মাছ, ব্যাং ইত্যাদি গৌণ খাদকের সংখ্যা কম।

25. সংখ্যার পিরামিডের শীর্ষ কী নিম্নমুখী হতে পারে?

উত্তর:- সাধারণত সংখ্যার পিরামিডের শীর্ষ মাথার দিকে থাকে। তবে অনেকক্ষেত্রে সংখ্যার পিরামিড ওলটানো আকার নিতে পারে। যেমন – ফলদায়ী গাছের তুলনায় ফলভোজী পাখির সংখ্যা বেশি হলে এবং ওই পাখিদের সংখ্যার চেয়ে পাখির দেহে বসবাসকারী পরজীবীদের (parasites) সংখ্যা আরও বেশি হলে সংখ্যার পিরামিড ওলটানো (inverted) আকার ধারণ করে।

26. খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে দুর্ভিক্ষ হলে সংখ্যার পিরামিড কোন আকার ধারণ করে?

উত্তর:- প্রাকৃতিক কারণে দুর্ভিক্ষ হলে সংখ্যার পিরামিড ওলটানো আকার নেয়।

27. জীবভর বা বায়োমাস-এর পিরামিড কী?

উত্তর:- কোনো বাস্তুতন্ত্রে বাদ্যস্তর অনুসারে প্রতি বর্গমিটারে শুদ্ধ জীবভরের পরিমাণ বা ওজন ক্রমপর্যায়ে সাজালে যে পিরামিড গঠিত হয়, তাকে জীবভর-এর পিরামিড বলে। ইংরেজি ভাষান্তরে একে ‘পিরামিড অব বায়োমাস’ (Pyramid of biomass) বলা হয়।

28. জীবভরের পিরামিডের উদ্দেশ্য কী?

উত্তর:- বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের বিষয়টি সংখ্যার পিরামিডের তুলনায় জীবভরের পিরামিডের সাহায্যে আরও পিরামিডের আকৃতির তফাত হতে পারে। আলোচ্য পিরামিড অনুসারে সর্বনিম্ন খাদ্যস্তরে জীবের মোট ভরের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয় এবং ভালো বোঝা যায়। তবে ঋতুর পার্থক্য অনুসারে জীবভরের উৎপাদনে পার্থক্য হয়। ফলে জীবভরের পরবর্তী উচ্চস্তরগুলিতে জীবভরের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে।

29. শক্তির পিরামিড কী?

উত্তর:- কোনো বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টিস্তর অনুসারে বিভিন্ন জীবের মধ্যে অর্জিত শক্তির পরিমাণ ক্রমপর্যায়ে সাজালে যে পিরামিড গঠিত হয় তাকে বাস্তুতন্ত্রের শক্তির পিরামিড বলে। ইংরেজি ভাষান্তরে একে “পিরামিড অব এনার্জি” বা “এনার্জি পিরামিড” (Pyramid of energy or Energy pyramid) বলা হয়। শক্তির একর যেভাবে প্রকাশ করা হয় তাহল শক্তির একক প্রতি একক ক্ষেত্রে (area) প্রতি একক সময় অনুসারে, যেমন, kJm2year 1 অর্থাৎ‍ কিলোজুল প্রতি বর্গমিটারে প্রতি বছরে।

30. শক্তির পিরামিডের বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর:- শক্তির পিরামিড অনুসারে সর্বনিম্ন পুষ্টিস্তরে থাকে প্রাথমিক উৎপাদক অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদ যেখানে সৌরশক্তি থেকে অর্জিত শক্তির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পরবর্তী উচ্চতর পুষ্টির স্তরগুলিতে নিম্নতর স্তর। থেকে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ লিন্ডেম্যান-এর “দশ শতাংশ নীতি” অনুসারে ক্রমশ কমতে থাকে। অর্থাৎ শক্তির পিরামিডে প্রতিটি স্তর তার পূর্ববর্তী স্তরের তুলনায় দশ শতাংশ আয়তনে ছোটো হয়। সুতরাং শক্তির পিরামিড অনুসারে সবুজ উদ্ভিদ স্তরে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তার সবটা প্রাথমিক খাদক স্তরে খাদ্যের মাধ্যমে পৌঁছোতে পারে না। তাই প্রাথমিক খাদক স্তর, যেমন— কীটপতঙ্গ স্তরে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ উদ্ভিদ স্তরের তুলনায় কম। শক্তি পিরামিডের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে শক্তি পিরামিডের শীর্ষ সব সময় মাথার দিকে থাকে। সংখ্যার পিরামিডের মতো ওলটানো আকৃতি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এই পিরামিডের নিম্নতর স্তরে শক্তির পরিমাণ সব সময় দশ শতাংশ বেশি।

31.  শক্তি পিরামিডের ওপরের স্তরে শক্তির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার কারণ কী?

উত্তর:- শক্তি পিরামিডের ওপরের স্তরগুলিতে ক্রমাগত শক্তির পরিমাণ কমতে থাকে। কারণ –

(1) সবুজ উদ্ভিদ উৎপাদক স্তরে সৌরশক্তি থেকে যে পরিমাণ শক্তি অর্জন করে, তার কিছুটা নিজের শারীরবৃত্তীয় কাজে খরচ করে। (2) তৃণভোজী প্রাণীরা সবুজ উদ্ভিদ খায়। সুতরাং তৃণভোজীরা সবুজ উদ্ভিদের থেকে শক্তি অর্জনের সময়ে তাপগতি বিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী কিছু কম শক্তি পায়। আলোচ্য সুত্রে বলা হয়েছে যে, শক্তি যখন এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়, তখন কিছুটা শক্তি হ্রাস পায়। এইভাবে তৃণভোজী থেকে মাংসাশী স্তরে এবং মাংসাশী থেকে আরও ওপরের স্তরে শক্তির জোগান ক্রমশ কমতে থাকে।

 

Read More:- WBMSC Assistant Engineer Recruitment 2022| Apply online Mode| Application last date| Salary & Other Details

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles