Bankura District Details Description | Know Your District, Population, Rivers, Temperature, Literacy… | বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস

Bankura District Details Description

Bankura District Details Description | Know Your District, Population, Rivers, Temperature, Literacy… | বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস:

অঞ্চলটি বিস্তৃত ছিল ভাগীরথীর পশ্চিম তীর থেকে ছোটনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত। এছাড়া অঞ্চলটি ছিল বীরভূম, ভাগীরথী নদীর পশ্চিমপারের মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলার কিছু অংশ। বাঁকুড়া জেলা রাঢ় অঞ্চলের কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল।

বেদ ও পুরাণে রাগের অধিবাসীদের ‘নিষাদ’ বলা হয়েছে। আর্য সংস্কৃতির সঙ্গে এদে সংস্কৃতির কোনো মিল ছিল না। অতীতে এই অঞ্চলটির নাম ছিল “সুপ্তভূমি”। “সুভ্র’ নামের পরিবর্তে ‘লাড়’ বা ‘রাঢ়’ নামটি প্রচলিত হয় খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের পরে। সাঁওতালি ভাষায় ‘লাড়” মানে ‘সাপ’। অনেকে মনে করেন জৈন ও গ্রিক লেখকরা মূল অস্ট্রিক ‘লাড়’ শব্দটি এই দুর্গম, শ্বাপদ-সংকুল অঞ্চলকে চিহ্নিত করতে ব্যবহার করেছেন। এই জেলায় সাঁওতালরা সংখ্যা গরিষ্ঠ।

Bankura District Details Description: বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস

Bankura Tehsil Map, Blocks in Bankura

1. বাঁকুড়া নামের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ আছে। কোলমুন্ডা ভাষায় ওড়াঃ বা ‘ড়া’ শব্দের মানে বসতি।

  • “ড়া জুড়ে তাই রাঢ়ের অনেক জায়গায় নামকরণ হয়েছে, যেমন- বাঁকুড়া, হাওড়া, রিষড়া, খাতড়া, চুঁচুড়া ইত্যাদি।
  • অন্য মতে, বস্ক (আঁকাবাঁকা) অপভ্রংশ বাকু থেকে এর নামের উৎপত্তি।

2. এই অঞ্চলের জঙ্গলে জীবজন্তুর সংখ্যা এখন অনেক কম। আগে বাঘ ঘুড়ে বেড়াত শালতোড় ও রায়পুর থানার নিবিড় জঙ্গলে।

এখন গ্রামের নামের সঙ্গে বাঘ শব্দটাই শুধু রয়ে গেছে বাঘনেজা, বাঘজুড়ি, বাঘডিহা, বাঘডোবা ইত্যাদি রূপে।

  • এখনও রানিবাঁধ, শুশুনিয়া, ঝিলিমিলির জালে নেকড়ে, হায়না ও ভালুকের দেখা মেলে।
  • এছাড়া বুনো শুয়োর, খরগোশ, বনরুই, বাঁদর ও হনুমান রয়েছে।
  • বন অনুপাতে পাখির সংখ্যা কম।

3. জেলার প্রধান নদী দামোদর রয়েছে বাঁকুড়া জেলার উত্তর সীমানা জুড়ে। ছোটনাগপুরের পালামৌ জেলায় দামোদরের উৎপত্তি।

এই নদী বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের মধ্যবর্তী সীমানা চিহ্নিত করছে।

  • জেলার দ্বিতীয় প্রধান নদী দ্বারকেশ্বর। এর অন্য নাম ধলকিশোর বা ঢলকিশোর। পুরুলিয়ায় এই নদীর জন্ম।
  • মেদিনীপুর জেলায় ঢুকে এই নদীর নাম রূপনারায়ণ (দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী ও মুক্তেশ্বরীর মিলিত নাম) হয়েছে।

4. প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল জেলার সত্তরভাগ কৃষিজমি।

জেলায় কৃষিজীবী শতকরা ৮২ জন। চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

  • এরমধ্যে অধিকাংশই অনুর্বর জমি।

5. জেলায় প্রচুর নদ-নদী থাকা সত্ত্বেও শীতের শেষে এবং গ্রীষ্মকালে জেলার উত্তর ও পশ্চিমের সমস্ত অঞ্চল জুড়ে জলের জন্য হাহাকার পড়ে যায়।

  • দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) স্থাপিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে এবং ১৯৫৬ সালে শুরু হয়েছিল কংসাবতী সেচ প্রকল্প।
  • ডিভিসির উপযোগিতা বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের কাজে সীমাবদ্ধ।
  • কংসাবতী প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেচের কাজে জলের ব্যবস্থা করা।
  • এই প্রকল্পের সেচের কাজ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।
  • এই প্রকল্পগুলি আংশিক প্রয়োজন মেটাতে পেরেছে।

একনজরে বাঁকুড়া জেলা

 

Bishnupur Tourism | Bishnupur Tourist Places | Bishnupur Travel Guide |  Bishnupur Weather | Bishnupur Photos | Travel.India.com

স্থাপনকাল: ১৮৮১ সাল।

ভৌগোলিক অবস্থান: উত্তর অক্ষাংশ ২৩৩৮ এবং ২২°৩৮´-এর মধ্যে বিস্তৃত এবং দ্রাঘিমাংশ ৮৭°৪৬’ পূর্ব থেকে ৮৬°৩৬ পূর্বের মধ্যে অবস্থিত।

সীমানা: উত্তরে পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণে ঝাড়খন্ড রাজ্য, পূর্বে হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিমে পুরুলিয়া জেলা।  (Bankura District Details Description)

আয়তন: ৬,৮৮২ বর্গ কিমি। আয়তনে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।

জেলা সদর: বাঁকুড়া।

মহকুমার সংখ্যা: ৩টি। বাঁকুড়া, খাতরা ও বিষ্ণুপুর।

ভূ-প্রকৃতি ও মৃত্তিকা

Red soil of Bankura district in the state of West Bengal,India. by debu |  ePHOTOzine

জেলাটিকে কয়েকটি প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায় ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত উত্তর-পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল (বাঁকুড়া জেলায় উল্লেখযোগ্য দুটি পাহাড় বিহারীনাথ এবং শুশুনিয়া), উঁচু-নিচু ল্যাটেরাইট উচ্চভূমি ও উপত্যকা নিয়ে জেলার মধ্যাঞ্চল এবং পূর্বদিকে বিষ্ণুপুর ও সদর মহকুমার অধিকাংশ পলিগঠিত নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি। চুনজাতীয় একপ্রকার নুড়ি দেখা যায় তাকে বলে ‘ঘুটিং’।

জলবায়ু: ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অংশবিশেষ হওয়ায় জলবায়ু শুষ্ক

উম্বুতা: চরমভাবাপন্ন। সর্বোচ্চ ৪৪° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ৮° সেলসিয়াস।

পাহাড় পর্বত: শালতোড়ায় বিহারীনাথ (উচ্চতা : ১,৪৬৯ ফুট), ছাতনায় শুশুনিয়া বা কোডাপাহাড় (উচ্চতা : ১,৪৪২ ফুট), মুকুটমনিপুর (উচ্চতা : ২০০ মিটার)। এগুলো পূর্বঘাট পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত।

নদ-নদী: দামোদর, দ্বারকেশ্বর (ধলকিশোর), শিলাই, কাঁসাই, জয়পণ্ডা, কুমারী, গন্ধেশ্বরী।

বাঁধ প্রকল্প

কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে ‘কংসাবতী বাঁধ নির্মিত হয়েছে।

কৃষিজ উৎপাদন

ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ, গম উৎপাদনে দশম, দুধ উৎপাদনে চতুর্থ ও ডিম উৎপাদনে দশম স্থান অধিকার করে আছে। এছাড়া আখ, আলু, তৈলবীজ প্রভৃতি এই জেলায় চাষ হয়।  (Bankura District Details Description)

স্বাভাবিক উদ্ভিদ

Shorea robusta, the sal/shaal tree forest in Joypur forest, near Bankura,  West Bengal. Stock Photo | Adobe Stock

নিবিড় বনভূমি শুরু হয়েছে ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে। ক্রমশ পূর্বদিকে হালকা হয়েছে এই বনভূমি।

  • এই জঙ্গলে শাল, সেগুন, পিয়াশাল, কুসুম, বহেড়া, মহুয়া, পলাশ, সজিনা, ডুমুর, আম, জাম, কাঁঠাল, বাবলা, পিপুল ইত্যাদি গাছ রয়েছে।
  • ছোটো গাছ বা আগাছার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বনওকলা, ভাঁট, আশ শেওড়া, ধুতুরা, নিশিন্দা, করাচি ইত্যাদি।
  • শুশুনিয়া পাহাড়ি অঞ্চল ঔষধি গাছে সমৃদ্ধ।
  • বিড়ি শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কেন্দু পাতা এখানে প্রচুর জন্মায়। শাল, ইউক্যালিপটাস, মেনুরি, সাবুই ঘাস, বাঁশ ইত্যাদি থেকে কাগজ শিল্পের জন্য দরকারি কাঁচামাল পাওয়া যায়।
  • মদ তৈরি হয় মহুয়ার ফুল থেকে। এই ফুল স্থানীয় মানুষের প্রায় তিন ভাগের পানীয়।
  • অতি দরিদ্ররা মহুয়া ফুল ছাতু আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি করে খায়।  (Bankura District Details Description)

খনিজ সম্পদ 

এই জেলা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। শালতোড়, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, বড়জোড়া অঞ্চলে কয়লা; থানাপাহাড়, চেরাডিংরি অঞ্চলে টাংস্টেন তৈরীর উলফ্রাম;

  • রানিবাঁধ থানার ঝিলিমিলিতে অভ্র; রায়পুর থানা অঞ্চলে কেওলিন পাওয়া যায়। এছাড়াও চীনামাটি, চুনাপাথর এই জেলায় পাওয়া যায়।

Read More:- Hooghly District Details Description | Know Your District Completely | Daily GK Update For Competitive Exams

জনসংখ্যা: ৩৫,৯৬,২৯২ জন (রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৩.৯৮ শতাংশ)।

পুরুষ: ১৮,৪০,৫০৪ জন।

মহিলা: ১৭,৫৫,৭৮৮ জন।

জনঘনত্ব: প্রতি বর্গ কিমিতে ৫২৩ জন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: ১২.৬৪ শতাংশ।

লিঙ্গ অনুপাত: ৯৫৪ জন (প্রতি ১০০০ জন পুরুষে)।

সাক্ষরতার হার: মোট ৭০.৯৫ শতাংশ। পুরুষ ৮১.০০ শতাংশ এবং মহিলা ৬০.৪৪ শতাংশ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মোট ডিগ্রি কলেজের সংখ্যা ৬টি।

পুরসভা (প্রতিষ্ঠা বছর): ৩টি। বাঁকুড়া (১৮৬৯), বিষ্ণুপুর (১৮৭৩), সোনামুখি (১৮৮৬)।

গ্রাম পঞ্চায়েত: ১৯০টি।  (Bankura District Details Description)

পঞ্চায়েত সমিতি: ২২টি।

ব্লক

২২টি। বাঁকুড়া-১, বাঁকুড়া-২, বড়জোরা, বিষ্ণুপুর, ছাতনা, গঙ্গাজলঘাটি, হিরবাঁধ, ইন্দপুর, ইন্দাস, জয়পুর, খাতরা, কোতুলপুর, মেজিয়া, ওন্দা, পাত্রসায়র রায়পুর, রানিবাঁধ, সালতোড়া, সারেঙ্গা, সিমলিপাল, সোনামুখী, তালডাঙরা।

থানা: ২১ টি।

লোকসভা আসন: ২টি। বিষ্ণুপুর (তপশিলি জাতি), বাঁকুড়া।

বিধানসভা আসন: ১২টি। রাজাপুর (তপশিলি উপজাতি), রানিবাঁধ (তপশিলি উপজাতি), ইন্দাস (তপশিলি জাতি), তালডাঙরা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর (তপশিলি জাতি), ছাতনা, বাঁকুড়া, ওল্ডা, সোনামুখি (তপশিলি জাতি), বড়জোড়া, শালতোড়া (তপশিলি জাতি)।

যোগাযোগ ও পরিবহণ: সাহেবগঞ্জ লুপলাইন রেলপথের সাহায্যে এই জেলা যুক্ত।

  • এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব রেললাইন এই জেলার মধ্য দিয়ে গেছে। জাতীয় সড়ক NH-60 এই জেলার ওপর দিয়ে গেছে।  (Bankura District Details Description)

বাণিজ্য কেন্দ্র: বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বড়জোড়া।

শিল্প

বিষ্ণুপুরের রেশম, তসর সিল্প, বালুচরি শাড়ি বিখ্যাত।

  • পোড়া মাটির সামগ্রী (বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ায় টেরাকোটা মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া বিখ্যাত), বিষ্ণুপুরের লণ্ঠন ও বিকনার ডোকরা শিল্প বিখ্যাত কুটির শিল্প, মুকুটমণিপুরের কেম্বাকুড়ার বাঁশের শিল্প, গামছা ও চাদর বিখ্যাত।
  • শুশুনিয়ার পাথরের তৈরি শৌখিন দ্রব্যসম্ভার অপরূপ এবং স্পিনিং মিল ইত্যাদি বীরভূম জেলার প্রধান শিল্প।

অর্থনীতি

বাঁকুড়া জেলার অর্থনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প।

  • কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে বাঁকুড়াবাসীদের জীবিকা হিসাবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে রেশম, তসর ও সুতি বয়ন প্রধান।
  • এখানে বিখ্যাত শাড়ি গাঢ় লাল রঙের ‘ধুপছায়া’ শাড়ি, রেশম ও সুতিমিশ্রিত ‘টান’ কাপড়, ‘ফুলম’ শাড়ি। ইদানীং বিষ্ণুপুরের ‘বালুচরী শাড়িও নাম করেছে।
  • বাঁকুড়ার রপ্তানিজাত দ্রব্যের মধ্যে এই শাড়ি অন্যতম। এছাড়া খনিজ সম্পদের ওপর এই জেলার অর্থনীতি অনেকাংশ নির্ভর করে।

 

হাসপাতালের সংখ্যা: সরকারি হাসপাতাল ৩টি এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ৬০১টি। । গ্রন্থাগারের সংখ্যা : ১৩০টি।

ক্রীড়াঙ্গন: সম্প্রতি বাঁকুড়ায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

 প্রধান উৎসব

Tribal & Folk Cultural Academy at Susunia, Bankura | Milaap

ঝাপান উৎসব (মনসামঙ্গলের কাহিনি নিয়ে মনসা ও চাঁদ সদাগরের গানের লড়াই) ও পৌষ সংক্রান্তিতে ‘বড়াম’ পূজা, ভাদুগান ও টুসুপরব এখানকার প্রধান উৎসব। এছাড়া ‘বাহা পরব’ বা ফুল পরব।

  • হীরাবাঁধ ব্লকে চাকাডোবা গ্রাম সন্নিহিত টিলা ডুংরিতে এই পরব পালিত হয়।

প্রধান আঞ্চলিক মেলা: বাঁকুড়া মেলা, বিষ্ণুপুর মেলা (নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই মেলা বাঁকুড়ার প্রসিদ্ধ কুটির শিল্পের জন্য বিখ্যাত)।

লোকসংস্কৃতি

রাবণ-কাটা নৃত্য

Purulia's folk dancers returning home after puja - Anandabazar

 

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে প্রতি বছর দুর্গাপুজার দশমী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত এই তিন দিন এই লোক নৃত্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

  • মল্লরাজাদের স্মৃতি উস্কে দিয়ে হনুমান, জাম্বুবান, সুগ্রীব ও বিভীষণ সাজেন এক-একজন। বাজনার তালে তালে পরিবেশন করা হয় রাবণ-কাটা নৃত্য।
  • নয় জনের দলে চার জন বাদ্যকার থাকেন। নাকাড়া, টিকারা, কাঁশি, ঝাঁঝ নিয়ে সঙ্গত দেন তাঁরা। বিষ্ণুপুরবাসীরা এই নৃত্য উপভোগ করেন।
  • প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই লোকনৃত্য। এর শুরু হয় বিষ্ণুপুরের রঘুনাথ জিউ মন্দিরের সামনে কুম্ভকর্ণ বধের মধ্য দিয়ে।
  • দ্বিতীয় দিন হয় ইন্দ্রজিৎ বধ। আর দ্বাদশীর দিন অর্থাৎ শেষ রাতে রাবণ বধ।
  • ১২ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মাটির রাবণের মূর্তি তৈরি করা হয়। রাবণের এই মূর্তির সামনে নৃত্য করতে থাকে হনুমান, সুগ্রীব, জাম্বুবান আর বিভীষণ।
  • এরপর একসময় তলোয়ার দিয়ে রাবণের মুণ্ডচ্ছেদ করেন বীর হনুমান।
  • রাবণ-কাটা নৃত্যে লুটিয়ে পড়া রাবণের দেহাংশের একটুকরো মাটি পেতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
  • তাঁদের বিশ্বাস, রাবণ বধের পর সেই দেহের মাটি বাড়িতে রাখলে মঙ্গল হয় সংসারে।

দর্শনীয় স্থান 

মল্লরাজাদের স্মৃতি বিজড়িত বিষ্ণুপুর (রাজত্বকাল : ৬৯৪-১৯৮৩ খ্রি.। হিন্দু রাজবংশ।

প্রথম রাজা ছিলেন আদি (রঘুনাথ) মল্ল। মল্লরাজাদের শাসনাঞ্চল ছিল।

  • বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল — বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, সাঁওতাল পরগনা, মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়ার কিয়দংশ।
  • ঝাড়খন্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেও তাঁরা রাজত্ব করতেন। বর্তমান বাঁকুড়া জেলার অন্ডা, বিষ্ণুপুর, এবং কোতুলপুর ইন্দাস অঞ্চল  বলে পরিচিত ছিল।
  • তিনটি জায়গায় রাজধানীর উল্লেখ পাওয়া যায়— লাউগ্রাম, প্রদুমপুর এবং বিষ্ণুপুর। মল্লরাজাদের আরাধ্য দেবী ছিলেন বিপদত্তারিণী দেবী।
  • শেষ মাত্র রাজা ছিলেন কালীপদ সিংহ ঠাকুর। মল্লরাজারা যে সকল মন্দিরগুলো নির্মাণ করেছিলেন—

[মল্লেশ্বর, শ্যাম রাই, জোর বাংলা, কালাচাঁদ, লালজী, মদন গোপাল, মুরালি মোহন, রাধা মাধব এবং শ্যাম মন্দির।]

  • এখানকার মন্দিরগুলিতে টেরাকোটা কাজ নয়নাভিরাম। মল্লরাজারা ৭টি বড় জলাশয় নির্মাণ করেন।
  • তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—লালবাঁধ, কৃষ্ণবাঁধ, যমুনাবাঁধ, কালীবাধ, শ্যামবাধ ইত্যাদি)।
  • শ্রীশ্রীসারদা মাছ জন্মস্থান জয়রামবাটী, পর্যটন কেন্দ্র মুকুটমণিপুর, এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ এখানে অবস্থিত,
  • ঝিলিমিলি, সোনামুখী (রেশমশিল্পের জন্য বিখ্যাত) রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান, বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চ (মল্লরাজাদের তৈরি), ছাতনার বাঁশুলী মন্দির ও বড়ু চণ্ডীদাসের (চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা) জন্মস্থান, হির বাঁধ প্রভৃতি এই জেলার প্রধান প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান।

জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব 

যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২): বেলিয়াতোড়। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। পটচিত্রের ধারায় নিজস্ব স্টাইল সৃষ্টি করেন।

  • পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত। তাঁর বসত বাড়ি বর্তমানে সংগ্রহশালা।

 বিমল ঘোষ, মৌমাছি (১৯১০-১৯৮২): প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক। মণিমেলার প্রতিষ্ঠাতা।

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২৪-২০০০)

সোনামুখী। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বাবা-মার দেওয়া নাম অণিমা। রবীন্দ্রনাথ সেই নাম বদলে রাখেন কণিকা।

  • ডাক নাম মোহর। ১৯৩৮ সালে প্রথম রেকর্ড বের হয় আধুনিক গানের। রবীন্দ্রনাথ আধুনিক গানের রেকর্ড বের হওয়ায় রুষ্ট হন।
  • ১৯৪৩ সালে কণিকা সঙ্গীত ভবনে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে কবি বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন।
  • সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, শিরোমণি, পদ্মশ্রী, দেশিকোত্তম প্রভৃতি সম্মানে ভূষিতা হন।
  • গ্রামের মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

এছাড়াও জেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা হলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মীনি সারদামণি (জয়রামবাটীতে জন্মগ্রহণ করেন।  রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অসামান্য),

  • চিত্রকর ও ভাস্কর্যশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ, দুর্জন সিং (চুয়াড় বিদ্রোহের নায়ক), অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (গায়ক), পার্থ দে (রাজনীতিবিদ), যদু ভট্ট (সঙ্গীতজ্ঞ) প্রমুখ।
  • বর্তমান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা (পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী) এই জেলার।

এক নজরে জেলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী 

Bankura District - Home | Facebook

  • কথায় আছে গান-বাজনা-মতিচুর এই নিয়ে বিষ্ণুপুর। এখানকার বালুচরি শাড়ির খ্যাতি জগৎজোড়া।
  • বিষ্ণুপুর ঘরানার ‘ধ্রুপদ’ সঙ্গীতের দিকপাল গায়কেরা হলেন- রামশঙ্কর ভট্টাচার্য, যদুভট্ট, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞান গোস্বামী (জন্মস্থান এই বিষ্ণুপুর)।
  •  মল্লরাজাদের সময় শ্রাবণ সংক্রান্তিতে সাপুড়েরা খেলা দেখাতে আসত, উৎসব। সম্প্রতি সাপ খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এই প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে।
  • বাঁকুড়ার উত্তর পশ্চিমাংশ পার্বত্য অঞ্চল। দুটি উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল–বিহারীনাথ (উচ্চতা : ৪৫২ মি.) ও শুশুনিয়া পাহাড় (উচ্চতা : ৪৪৭ মি.)।  জেলার ৩০ শতাংশ কৃষিজমি সেচ প্লাবিত।
  • এখানে যারা পিতল নিয়ে কাজ করেন তাদের ‘ডোকরা’ বলা হয়।
  • লোকপুর ও কেন্দুয়াডিহিতে ভেড়িয়াল শ্রেণির লোকেরা ভেড়ার লোম থেকে কম্বল তৈরি করে। বিষ্ণুপুরী লণ্ঠন বিষ্ণুপুরের জনপ্রিয় কুটির শিল্প।
  • বাউরি ও বাগদি সম্প্রদায়ের লোকেরা কুকুর মরলে বা বাচ্চা দিলে অশৌচ পালন করে।
  • এই জেলার জনপ্রিয় দেবতা শিব। আর দেবী হলেন মনসা।
  • এই জেলার জয়রামবাটি গ্রাম রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সহধর্মিনী সারদাদেবীর জন্মস্থান।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’

  • এই জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে গবেষক ও ভাষাবিদ বসন্ত রায় ১৯০৯ সালে বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান গ্রন্থ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুঁথি আবিষ্কার করেন। এর লেখক ছিলেন বড়ু চন্ডীদাস।
  •  এখানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ (স্থাপিত ১৯২৪) অবস্থিত। কংসাবতী ও কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে কংসাবতী বাঁধ নির্মিত হয়েছে।
  •  ভাদুগান ও টুসু পরব এখানকার বিখ্যাত আঞ্চলিক লোক উৎসব।
  • জাতীয় মেলার মর্যাদায় ভূষিত বিষ্ণুপুর মেলা প্রতিবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত * ছাতনাতে বড়ু চণ্ডীদাসের উপাসিত বাঁশুলি দেবীর মন্দির অবস্থিত।
  •  জেলার আদিম অধিবাসী—শবর, সাঁওতাল, মুণ্ডা, মাহালি, কোড়া ও ভূমিজ।
  •  ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা বীর হাম্বিরের রাজত্বকালে জগন্নাথ কর্মকার বানিয়েছিলেন ১২.৫ ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার দলমাদল কামান।
  •  বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় গুল্ম জাতীয় ‘জ্যাট্রোফা’ চাষ হয়। জ্যাট্রোফা বা রতনজোত বা ভেরান্ডা থেকে বায়োডিজেল উৎপাদন হয়।

পুরুলিয়ায় ৪০০ একর ও বাঁকুড়ায় ২০০ একর জমিতে এর চাষ করা হচ্ছে।

এর ফল থেকে তেল উৎপন্ন হয় যা পরিশোধন করে বায়োডিজেল হয়। এই ডিজেল পেট্রোপণ্যের বিকল্প।

  •  পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক শাল গাছ পাওয়া যায়—বাঁকুড়া জেলায়।
  •  বাঁকুড়ার ডিহরে খননকার্য করা হবে প্রত্নতাত্বিক সম্পদ পাওয়ার জন্য।
  •  ২০১৮ সালে বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি থেকে ২০ কিমি দুরে ছান্দাপাথর অঞ্চলে উলফ্র্যামাইটের আকরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এই অঞ্চলের চেরাডুঙ্গি ও থানপাহারে পরিত্যক্ত দুটি খাদানে এই আকরিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

Read More:- BSF Constable Tradesman 2022 | Download Previous Years Question Papers PDF | For More Updates Check The Site

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles